নেতা পদবিটি বড়ই আকর্ষণীয়,বড়ই ফলদায়ক-তারেক হোসাইন।
অবচেতন রাজনীতির
রোষানলে হারিয়ে যাচ্ছে"কর্মী"নামক সেই নির্মোহ শব্দটি।
দেশে এখন কর্মী নেই,সবাই নেতা। নেতা বেশি হওয়ায় দুর্ভোগও বেশি। নেতা বেশি
হওয়ায় বক্তৃতাও বেশি। কিন্তু তাদের সে বক্তৃতা অনেকে শুনতে চায় না। কারণ তারা শুধু
নামেই নেতা যোগ্যতা এবং নেতৃত্বে নেতা নয়। রাজনীতিতে শুদ্ধাচার প্রয়োজন। আমি যদি
শুদ্ধ না হই,তবে আরেকজনকে শুদ্ধ হতে বলব
কীভাবে। রাজনৈতিক নেতার আধিক্যের বিষয়টি টের পেতে এখন খুব বেশি বেগ পেতে হয় না।
চোখ-কান একটু খোলা রেখে পথ-ঘাটে চলাফেরা করলেই
বিষয়টি উপলব্ধি করা সম্ভব। অবস্থাটা এমনই যে, আপনি যেখানে যাবেন ,দু’চারজন নেতার
সঙ্গে আপনাকে ধাক্কা খেতেই হবে। পাড়া-মহল্লায় দেখবেন নেতার ছড়াছড়ি। এক সময়
রাজনৈতিক দলগুলোতে নেতার সংখ্যা ছিল নেহায়েত অল্প। সবাই ছিল কর্মী। এমনকি যারা
নেতৃত্বস্থানে ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকে আবার বিনয়ের সাথে নিজেকে কর্মী হিসেবেই
পরিচয় দিতেন। আর এখন কর্মী পরিচয় দেয়াটা অনেকের কাছেই যেনো লজ্জার বিষয়। চলনে-বলনে, আচার-আচরণে, ভাব-ভঙ্গি আর কথাবার্তায় এটা জাহির করতে চান যে, তিনি অমুক দলের একজন বড় নেতা।
নেতা পরিচয়ে সমাজে পরিচিত হতে কী
না আগ্রহ এখনকার নেতাদের। এর কারণ কি? নেতা পদবিটি বড়ই আকর্ষণীয়, বড়ই ফলদায়ক। এ
বিশেষণটি যদি একবার লাগানো যায় তাহলে জীবনে
উন্নতির সিঁড়ি খুঁজে পেতে তেমন একটা সমস্যা হয় না। একটা সময় ছিল,নেতা মানেই অতি সম্মানীয়জন। যিনি একবার নেতা হিসেবে পরিচিত
হতেন,
সমাজে তিনি সম্মানের আসনটি পেয়ে যেতেন। নিজের দল ছাড়া অন্য দলের লোকটাও তাদের সম্মান
করত। আর এখন সে অবস্থা নেই। ভিন্ন দলের
নেতাকে সম্মান তো দূরের কথা, একই দলের
নেতারাও একে অপরকে সম্মান করেন না। বরং কে কাকে ল্যাং মেরে উপরে উঠবেন সে হীনকাজে
লিপ্ত সবাই।
আর কার চেয়ে কে বড় নেতা, এটা জাহির করতে এমন কোনো হীনকাজ নেই যা তারা করতে পারেন না।
রাজনীতি ছিল এক সময় দেশ ও মানুষের সেবা করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা। আর বর্তমানে
চাঁদাবাজী,ধান্দাবাজি,বেহায়াপনায় লিপ্ত তথাকথিত নেতারা আত্মস্বার্থ অর্জনের উত্তম পন্থা হিসেবে
রাজনীতিকে ব্যবহার করছে। সমাজ,দেশ ও জাতির
স্বার্থ চিন্তা কয়জন রাজনৈতিক নেতাদের মস্তিষ্কে বাসা বাঁধতে পেরেছে তা গবেষণার
বিষয় হতে পারে। কথা শুরু করেছিলাম দেশে নেতার আধিক্য নিয়ে। নেতার সংখ্যা বেশি
হওয়ায় দেশের রাজনীতিও আর ঠিকঠাক চলছে না।
তবে তা নিয়ে কারো মাথাব্যথাও নেই। রাজনীতি ঠিকঠাক চলল কি চলল না সেটা দেখার ফুরসৎ ওইসব তথাকথিত নেতাদের নেই। রাজনীতি থাক বা না থাক তাতে কি? তারা ‘নেতা’ থাকলেই হলো। আর রাজনীতি? সেটাতো এসব নেতা যেভাবে করবেন, যে পথে চালাবেন সেভাবে সেপথেই চলবে। আর সেজন্যই কবিগুরুর অনুকরণে বলা যায়,,‘আমরা সবাই নেতা, আমাদের এই নেতার রাজত্বে।
পরিষেশে, শ্রদ্ধেয় নেতাদের কাছে আবেদন আত্মস্বার্থ পরিহার করে
কর্মীবান্ধব রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করুন। অন্যথায় দলের কঠিন সময়ে নৌকার বৈঠা ধরার
মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.