সময়ের সাহসী সন্তান চট্টলবীর আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
সীমাবদ্ধতার গণ্ডি ছাপিয়ে এ অঞ্চলের সব মানুষের প্রিয় ও নির্ভরতার আশ্রয়স্থল ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।
আলহাজ্ব মহিউদ্দিন চৌধুরী এই জনপদের সেরা সন্তানদের একজন। জনপদের মানুষের অব্যক্ত কথাকে
ভাষা দিয়েছেন তিনি। এখানকার মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, হতাশা-বঞ্চনা তার মতো করে কেউ কখনো বুঝতে পারেনি। বিপদে-আপদে
মানুষের পাশে থেকে সাহস যোগানো পরীক্ষিত বন্ধু ও প্রকৃত অভিভাবক ছিলেন তিনি।
আলহাজ্ব এ বি
এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন একজন ফুলটাইম পলিটিশিয়ান। রাজনীতির বাইরে
তার দ্বিতীয় কোন চিন্তা ছিল না। এখনতো সব বিজনেসম্যান কাম পলিটিশিয়ান। রাজনীতিতে ফুলটাইমাররা
প্রায় বিরল হতে চলেছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবনা জগতের সবটা জুড়ে ছিল দেশ-দল আর চট্টগ্রাম।
দলের নেতা হয়েও দলীয় সীমাবদ্ধতায় কখনোই নিজেকে আটকে রাখেননি। সীমাবদ্ধতার গণ্ডি
ছাপিয়ে এ অঞ্চলের সব মানুষের প্রিয় ও নির্ভরতার আশ্রয়স্থল ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড আর পঁচাত্তরের পটপরিবর্তন তিনি নিরবে মেনে নেননি। তিনি হয়েছিলেন
সশস্ত্র প্রতিবাদী। এই অকুতোভয় দেশপ্রেমিক বীরযোদ্ধার অসীম সাহসের পরিচয় মেলে তখন।
এই সাহস তার স্বভাবজাত, তিনি তো একাত্তরের রণাঙ্গনের
বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আশির দশকের শুরুতে হুলিয়া মাথায় নিয়ে চট্টগ্রামে সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন
ও দিশেহারা নগর আওয়ামী লীগ গুছিয়েছিলেন এক অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায়। আশি থেকে নব্বই
দশকে এই নগরের সকল আন্দোলন-সংগ্রাম, সামরিক ও স্বৈরাচারবিরোধী
কর্মসূচিতে কখনো নেপথ্যে, কখনো প্রকাশ্যে মূল নিয়ামক
শক্তি ছিলেন আলহাজ্ব এ বি
এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু মুজিবের রাজনীতি করেছেন। জেল, জুলুম আর হুলিয়া তার রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে তাঁকে এক মুহূর্তের জন্যও টলাতে পারেনি।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ভিন্নমতের সাথে সহঅবস্থান
ও সহমর্মিতা আর সহযোগিতার মূর্ত প্রতীক ছিলেন তিনি। ছাত্ররাজনীতি থেকে শ্রমিক রাজনীতি করতে করতে একজন
মহিউদ্দিন হয়ে উঠেন ‘প্রিয় মহিউদ্দিন ভাই’।
৯১-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী বিধ্বস্ত উপকূলে তার অতিমানবীয় ভূমিকা চট্টগ্রামবাসী
কখনোই ভুলবে না। দাফন-কাফন থেকে শুরু করে উপদ্রুত এলাকার লোকদের জন্য খাওয়ানোর ব্যবস্থা
করা, এমনকি উপদ্রুত মানুষের চিকিৎসায় মুসলিম হলে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন
করেছিলেন তিনি। অথচ তিনি তখন ক্ষমতাসীন দলের কেউ নন। স্রেফ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক। বন্দরটিলায় নৌবাহিনীর সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের দাফন ও সৎকারে
সবার আগে এগিয়ে এসেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরকম আরো অনেকবার সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
একজন সিজন্ড নেতা ছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
জননেতা এম এ আজিজ এবং জহুর আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে চট্টগ্রামের আপামর
জনগণের কাছে নিয়ে গেছেন। সেই স্রোতধারায় নবতর গতি এনেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রামের
মানুষ তাকে ‘চট্টলবীর’ বলতো। মানুষের ভালোবাসায় ভর করে তিনি পরিণত হন জননেতায়। মানুষের পাশে থাকতে পারাটাই
ছিল তার প্রশান্তি। আর মানুষও তার প্রয়োজনে ছুটে যেত প্রিয় নেতার কাছে। তার দ্বার অবারিত
ছিল সবার জন্য।
এই নগরীতে কোথায় নেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছোঁয়া। টানা সতের বছর নির্বাচিত মেয়র ছিলেন
এই নেতা। কতটা গভীর ভালবাসায় জড়িয়ে ছিলেন এই নগরের সাথে, এই নগরবাসীর সাথে, তা পরিমাপের বাইরে। তিনি কখনো
চট্টগ্রাম ছাড়তে চাননি। এই শহর ছাড়তে হবে বলে তুচ্ছ করেছেন মন্ত্রিত্ব। হতে চাননি কেন্দ্রীয়
নেতাও। থাকতে চেয়েছেন শুধুই এই নগরের একজন রাজনীতিক হয়ে, অভিভাবক হয়ে। নিজ সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েও বন্দর রক্ষা, গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনসহ চট্টগ্রামের স্বার্থে বারবার গর্জে
উঠেছিলেন তিনি।
সত্যিকারের রাজনীতি যে জনসেবা তার প্রমাণ আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি সময়ের
সাহসী সন্তান। প্রয়াণ দিবসে অযুত সালাম।
রুশো মাহমুদ
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.