পেয়ারা কমলা থেকে বেশি গুন সম্পন্ন।
পেয়ারা কমলা থেকে বেশি গুন সম্পন্ন।
পেয়ারা আপেলের তুলনায় যোজন যোজন এগিয়ে রয়েছে। এই গরিবানা ফলটিতে কমলার তুলনায় ৪ গুণ বেশি ভিটামিন সি এবং ৩ গুণ বেশি আমিষ রয়েছে। এতে আনারসের চেয়ে ৪ গুণ বেশি আঁশ রয়েছে আর টমেটোর থেকে ২ গুণ বেশি লাইকোপেন রয়েছে। রয়েছে কলার চেয়ে সামান্য বেশি পটাশিয়াম। আসুন জেনে নেওয়া যাক পেয়ারা ও তার গুণাগুণ সম্পর্কে।
পেয়ারা
পেয়ারা (ইংরেজি Guava) একরকমের সবুজ রঙের বেরী জাতীয় ফল । তবে অন্যান্য বর্ণের পেয়ারাও দেখতে পাওয়া যায়। লাল পেয়ারাকে (Marroonguava) রেড আপেলও বলা হয়। পেয়ারার বৈজ্ঞানিক নাম Psidiun guajava । পেয়ারার প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতি আছে।মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রভৃতি স্থানে পেয়ারা বেশি জন্মে। ভারতবর্ষে ১৭ শতাব্দীতে পেয়ারা আসে।দেশের বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্রগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের পেয়ারার চাষ হচ্ছে।
পেয়ারার উপকারিতাঃ-
প্রোস্টেট ক্যান্সার কমে
পেয়ারাতে লাইকোপেন(Lycopene), কোয়ারকেটিন(Quercetin), ভিটামিন সি এবং আরো কিছু পলিফেনল আছে যা কিনা শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে আর এই এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার কমাতে অনেক সাহায্য করে পেয়ারা। আর সেই সাথে পেয়ারা খেলে মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
পেয়ারাতে আছে পর্যাপ্ত ফলিক এসিড আর ফলিক এসিড একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজন। সব গর্ভবতীদেরকেই ডাক্তাররা ফলিক এসিড প্রেসক্রাইব করে থাকেন কারণ এটি বাচ্চার নার্ভাস সিস্টেমকে (স্নায়ুতন্ত্র) উন্নত করে। আর সেই সাথে এটি বাচ্চাদের নিউরোলোজিক ডিজঅর্ডার থেকে দূরে রাখে।শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে পেয়ারার সব চাইতে বেশি কার্যকরী। পেয়ারায় রয়েছে ভিটামিন বি৩ ও নিয়াসিন যা মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্য বজায় রাখে ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। পেয়ারার ভিটামিন বি৬ ও পিরিয়ডক্সিন মস্তিষ্কের নার্ভের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
পেয়ারা পাতায় দাত ব্যথা ভাল হয়
পেয়ারার পাতায় আছে এন্টি-ইনফ্লামেটরি (প্রদাহ-বিরোধী) গুণ এবং খুব শক্তিশালি এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ক্ষমতা আছে যা কিনা ইনফেকশনের সাথে যুদ্ধ করে এবং জীবাণু ধ্বংস করে। আর তাই পেয়ারার পাতা দাত ব্যথার জন্য খুব ভাল একটি ওষুধ,যা কিনা আপনি ঘরে বসেই দূর করতে পারবেন। তাছাড়া শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ পেয়ারা পাতার জুস গ্যাস্ট্রাইটিসের সমস্যায় উপকারী।
খারাপ কোলেস্টেরল কমায়
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেয়ারা বেশ কাজ দেয়। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ভাবে লাইকোপিন সমৃদ্ধ গোলাপি পেয়ারা খেলে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া পেয়ারা ট্রাইগ্লিসারাইড এবং LDL নামক একটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় যার ফলে হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
পেয়ারা হার্ট সুস্থ রাখে
এটি রক্তসঞ্চালন ঠিক রাখে এবং কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পেয়ারা খেতে পারেন। ১৯৯৩ সালে “Journal of Human Hypertension” এ প্রকাশিত হয় যে নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্ত চাপ ও রক্তের লিপিড কমে। তাই হার্ট সুস্থ রাখতে পেয়ারা হতে পারে আপনার ভরসার জায়গা।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে
নিয়মিত পেয়ারা খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। কারণ পেয়ারায় যে আঁশ আছে, তা শরীরে চিনি শোষণ কমাতে পারে। চাইনিজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা ব্যবহার হয়ে আসছে। ১৯৮৩ সালে American Journal of Chinese Medicine প্রকাশ করে যে, পেয়ারার রসে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস মেলাইটাসের চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পেয়ারা পাতাও বেশ কার্যকর। কচি পেয়ারা পাতা শুকিয়ে মিহি গুঁড়ো করে ১ কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ দিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রেখে তারপর ছেঁকে নিয়ে পান করতে পারেন প্রতিদিন।
পেয়ারার পাতাঃ অনেক নারীরই মাসিককালিন পেট ব্যাথা হয়। এ সময় অনেকেই ব্যাথার ঔষধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু এ সময় পেয়ারার পাতা চিবিয়ে বা রস খেলে মাসিককালিন ব্যাথা থেকে অধিকতর দ্রুত উপশম লাভ করা যায়।
দাঁত ও মাড়ি সুস্থ
পেয়ারা বিভিন্ন ভিটামিন যেমন ভিটামিন C, A, B2 এবং E তে সমৃদ্ধ। পেয়ারাতে কমলা এবং পাতি লেবুর থেকেও বেশি ভিটামিন A এবং ভিটামিন C থাকে বলে বিশ্বাস করা হয়।বিশেষ করে ভিটামিন ‘সি’ এর পরিমাণ এত বেশি যে আমলকী বাদে অন্য কোনো ফলে এত ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায় না।পেয়ারা ভিটামিন সি’র ভালো উৎস। এতে ২১১ মি.গ্রা. ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি মুখগহব্বর, দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখে। পাশাপাশি বিপাকেও সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
একটা পেয়ারায় রয়েছে চারটি কমলালেবুর সমান পুষ্টি।তাই সপ্তাহে অন্তত একটি হলেও পেয়ারা খাওয়া উচিত। পেয়ারার খোসায় রয়েছে আঁশজাতীয় উপাদান। পেয়ারার ভেতরেও রয়েছে আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও পাকস্থলীর ক্যানসার দূরীকরণে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
তাহলে আসুন এই বর্ষা মৌসুম কাটুক পুষ্টিকর ফল পেয়ারার সাথে।
পেয়ারার অপকারিতাঃ-
প্রত্যেক ফলেরই কিছু না কিছু অপকারিতা রয়েছে। তেমনি পেয়ারারও রয়েছে। যে কোন কিছু মাত্রাতিরিক্ত খেলে তার কিছু সমস্যা থাকবে। পেয়ারার কয়েকটি অপকারিতা ।
ব্যাকটেরিয়া
অন্যান্য যে কোন ফলের মতো পেয়ারাতেও ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রামণ হয়। বিশেষ করে যদি পেয়ারার চামড়া ফাটা বা ক্ষতিগ্রস্থ থাকে তবে তাতে ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই পেয়ারা উপরের চামড়া ফেলে দিয়ে খাওয়া বযাক্টেরিয়ার উপদ্রব থেকে রেহাই দিতে পারে।
পেট ফাপা
পেয়ারা একটি উচ্চ ফ্রুক্টোজ সমৃধ ফল। অধিক পরিমাণে পেয়ারা খেলে এর খনিজ এই উপাদানটি আমাদের এবং সাথে কিছু ব্যাক্টেরিয়া মিলে পেটে গ্যাস উতপন্ন করে এবং পেট ফাপা অনুভূত হয়।
সুগার বৃদ্ধি
অধিক পেয়ারা খেলে আপনার ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর পাশাপাশি এটিতে কোন প্রোটিন এবং ফ্যাট না থাকায় আপনি পেট ভরে পেয়ারা খেলেও একটু পর দেখবেন আপনার আবার ক্ষুধা পেয়ে যাচ্ছে। কারন শরীরে প্রোটিনের অভাব থেকেই যায়।
ডাইরিয়া এবং পেটের পীড়া
উচ্চ মাত্রার ফ্রুক্টজ হজম করতে না পারার কারনে অনেক সময় ডাইরিয়া এবং পেটব্যাথা হতে পারে। আর পেয়ার ভিতরের অংশে অনেক বীজ থাকে। এই অংশটি আমাদের পেটে কখনোই ঠিক মত হজম হয়না। তাই অধিক পেয়ারা খেলে পেট ব্যাথা এবং পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.