প্রবীন রাজনীতিবিদ এ কে এম বেলায়েত হোসেন’র সংক্ষিপ্ত জীবন কথা -পর্ব ০১
আলহাজ্ব এ কে এম বেলায়েত হোসেন’র রাজনীতির টুকরো স্মৃতি
আলহাজ্ব এ কে এম বেলায়েত হোসেন ১৯৪৩ সালের ০৬ সেপ্টেম্বর সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা মরহুম মোহাম্মদ ওয়াজি উল্লাহ একজন নাবিক ও কৃষক ছিলেন। তাঁর মা প্রয়াত মনোয়ারা বেগম, তিনি ছিলেন একজন গৃহবধূ। একেএম প্রথমে সন্দ্বীপে কাটাঘর জিএন হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি সৈয়দপুর সরকার থেকে বিএ পাস করেন। কলেজ রাজশাহী। তিনি হাতিয়া ইউনিয়ন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও পড়াশোনা করেছেন।
আলহাজ্ব এ কে এম বেলায়েত হোসেন একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে মিছিল মিটিং এ নেতৃত্ব দেয়ার কারনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গন আন্দোলন এং ৭৫ পরবর্তী সকল আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছেন -চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন (১৯৯৫-২০১৩) তিনি এখন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র উপদেষ্টা। তিনি চট্টগ্রামের তিনটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাও। তিনি একটি বীমা সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন। এ কে এম চট্টগ্রাম (১৯৯৯-৯৬ () লায়ন্স ক্লাবের সেক্রেটারি ও চার্টার সেক্রেটারিও ছিলেন। সম্প্রতি তিনি সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশের সভাপতি হন।তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
আলহাজ্ব এ কে এম বেলায়েত হোসেন বিয়ে হয়েছিল কানিজ ফাতেমার সাথে। যিনি পরে অক্টোবরে ২০০৮ সালে মারা যান। তাদের ২ ছেলের এবং ২ মেয়ের রয়েছে। তার বড় ছেলে বেলাল হায়দার পাভেজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রলয় বাংলাদেশের উপ-সচিব। তার ২য় ছেলে রাসেদ হায়দার সোহেল ফ্রান্সে থাকেন । তাঁর বড় কন্যা হুরে আরা বেগম বিউটি একজন রাজনীতিবিদ এবং তিনি চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক । তাঁর ২য় মেয়ে সোনিয়া হায়দার মুন্নি একজন কন্ঠশিল্পী তিনি বেতার,টিভি সাথে যুক্ত,সোনিয়া হায়দার মুন্নি চট্টগ্রাম মহানগর ২৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাঃ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
আলহাজ্ব এ কে এম বেলায়েত হোসেন ১৯৯-২০০৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। সভাপতি ছিলেন আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বাংলদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সাথেও সাক্ষাত করেছেন। সে সময় তিনি একটি বীমা সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন। আলহাজ্ব এ কে এম বেলায়েত হোসেন চট্টগ্রামের লায়ন্স ক্লাবের (১৯৯৫-৯৬) secretary and charter secretary ছিলেন। রাজনীতি করার পাশাপাশি তিনি তিনটি নামী স্কুল, যা "শাহ আমানত শিশু নিকেতন", "রাবেয়া বসরী উচ্চ বিদ্যালয়" এবং "গরিব-ই-নাওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়" এর প্রতিষ্ঠাতা, সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হন। ২০১৯ সালে থেকে তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
আলহাজ্ব এ কে এম বেলায়েত হোসেন’র রাজনীতির টুকরো স্মৃতি
আমি নবম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করার সময়কার কথা। বিদ্যালয়ের কমিটি সেক্রেটারি প্রভাবশালী জমিদার মুসলিম লীগ নেতা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন। আমি তার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ গ্রহন করি। এ ঘটনাকে
কেন্দ্র করে কতিপয় সন্মানিত শিক্ষকের ষঢ়যন্ত্রের কারনে আমাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। জীবনে
প্রথম রাজনীতির নির্মম শিকারে পরিনত হলাম।
আমি স্বেচ্ছায় দ্বীপান্তরিত হলাম। সন্দ্বীপ ছেড়ে গিয়ে হাতিয়া ইইনিয়ন মডেল হাই স্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিক পাশ করি। ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে মিছিল মিটিং এ নেতৃত্ব দেয়ার কারনে আমি গ্রেপ্তার হই। আমি' ৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গন আন্দোলন এং ৭৫ পরবর্তী সকল আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভুমিকা
রেখেছি।'
৮২ সাল থেকে আমি চট্টগ্রাম মহানগর আঃ লীগের কর্মকর্তা এবং '৯৬ সাল থেকে ক্রমাগত ১৯ বছর সহসভাপতি এবং দুঃসময়ে অসংখ্যবার ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। ১/১১ এর দুঃসময়েও
আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়ীত্ব পালন করেছি। রাজ- নীতির কারনে আমাকে সাড়া জীবন কঠিন কষ্ট স্বীকার
করতে। আমার সন্তানেরা আমার রাজনৈতিক আদর্শ ধারন করে যাচ্ছে।
হোটেল গার্ডেন সিটি
সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময়কার স্মৃতি .বিজরিত হোটেল গার্ডেন সিটি
অনেক দিন পর রিয়াজুদ্দিন বাজারের ভিতরে কাপড়ের গলিত গেলাম। তামাকু মণ্ডি লেইন সহ
বিভিন্ন অলিগলিতে ঘুরাঘুরি করলাম। তামাকু মণ্ডি লেইন হয়ে ভিতরে গেলে দেখা যাবে লাল রঙের একটি বহুতল ভবন। নীচে মার্কেট,উপরে আবাসিক হোটেল। নাম হোটেল গার্ডেন সিটি। অতি সাধারণ মানের একটি হোটেল। আন্দোলনের সময় রাত্রি যাপনের জন্য এটা ছিল আমার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মাঝেমধ্যে তদানিন্তন ছাত্র নেতা আসলাম হোসেন (বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ) আমার সঙ্গি হতেন। অনেক সময় স্থান পরিবর্তন করে কদম তলি হোটেল ফেরদৌস, সাধারণ বীমা রেষ্ট হাউস,সিলেট হোটেল, এনসিসি ব্যাংকের ডিরেক্টর কাসেম সাহেবের বাসায় রাত যাপন করতাম। এসব কষ্টের দিনগুলো এখন কেবলি স্মৃতি।
মহিউদ্দিন চৌধুরী বললেন আমারই ক্ষতি হয়।"
১৯৮৭ সাল। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল সারা দেশ। একের পর এক হরতাল অবরোধ কর্মসূচি চলছিল। সরকার পতন আন্দোলনের লাগাতার কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ১০ নভেম্বর ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। সে সাথে দেশব্যাপী চলছিল সরকার বিরোধী লাগাতার মিছিল মিটিং হরতাল অবরোধ কর্মসূচি। সিদ্ধান্ত ছিল ১০ নভেম্বর ঢাকার অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ গ্রহনের জন্য আগের দিন ৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের আগ্রহী কর্মীদেরকে ঢাকা পাঠানো হবে। আমরা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের কয়েকজন কর্মকর্তা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেকান্দর হায়াত খানের নেতৃত্বে গোপন স্থানে বৈঠক করে আন্দোলনের কর্মসূচী বাস্তবায়নে কাজ করতাম। সাধারণ সম্পাদক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী তখন জেলখানায় বন্ধি ছিলেন। জেলখানা থেকে তিনি আমাদের নিকট সোর্সের মাধ্যমে জরুরী নির্দেশনা দিতেন।
আমরা কোনদিন কোথায় বসব সেবিষয়টি কো-অর্ডিনেট করতো ছাত্রলীগ নেতা হাসান মাহমুদ শমসের। নভেম্বরের ৯ তারিখের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় নজু মিয়া লেইনে প্রয়াত শামসুল আলম শামসুর বাসায়। সেদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন : প্রয়াত সেকান্দর হায়াত খান, শ্রম সম্পাদক লিয়াকত আলী খান, সদস্য মোহাম্মদ জাফর, ছাত্রনেতা হাসান মাহমুদ শমসের এবং আমি। আমি তখন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলাম। সকাল দশটার কিছু পরে সেখানে হাজির হয় দুজন মহিউদ্দিন ভক্ত নিবেদিত প্রান দলীয় কর্মী সন্তোষ ও স্বপন। প্রয়াত সেকান্দর হায়াত খানের পরামর্শে আমি লিয়াকত আলী খানকে আমার নিকট রক্ষিত টাকা থেকে দশ হাজার টাকা দিলাম। লিয়াকত টাকা নিয়ে সন্তোষ এবং স্বপনকে সহ বেরিয়ে গেল। আমরা বিকাল দুইটার পর
রেলওয়ে ষ্টেশনে গেলাম। প্রায় দেড়শ টিকিট অগ্রিম নিয়ে রাখা হয়েছিল। ঢাকা যেতে ইচ্ছুক ছাত্র কর্মী দের প্রত্যেককে একটি টিকেট এবং ফিরতি টিকেটের টাকা এবং অতিরিক্ত আরও একশত টাকা করে দেয়া হল। তারা বিকাল তিনটার ট্রেনে ঢাকা যাবে। ট্রেন ছেড়ে যাবার কিছুক্ষণ আগে তদানিন্তন চট্টগ্রাম উত্তরজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মঞ্জু এসে বলল উত্তর জেলার কয়েকজন ছাত্র ঢাকা যাওয়ার জন্য এসেছে কিন্তু নেতারা কেউ আসেননি।সেকান্দর ভাই'র সঙ্গে আলাপ করে আমার কাছে থাকা উদ্বৃত্ত টিকেট এবং টাকা মঞ্জুর হাতে তুলে দিলাম। আমরা জুবিলী রোড আমতলায় বিক্ষোভ সমাবেশে এসে দারুল ফজল মার্কেট ভবনের সামনের ফুটপাতে দাঁড়ালাম। এসময় ছাত্রলীগের নেতা আশেকরসুল টিপু এসে বলল, সন্তোষে এবং স্বপন বোমা বিষ্ফোরণে নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল আশকার দীঘির পাড় থেকে পুলিশ ক্ষত বিক্ষত বিকৃত লাশগুলো নিয়ে গেছে। দুই সন্তানের পিতা সন্তোষ এবং যুবক স্বপন ছিল চট্টগ্রামে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ।
দুদিন পর মহিউদ্দিন ভাই সোর্স ওহাবের মাধ্যমে জেলখানা থেকে একটি চিরকুট লিখে পাঠান। চিরকুটের পাঁচটি শব্দ আমার হৃদয়কে বুলেটের মত বিদ্ধ করেছিলো। তিনি লিখেছিলেন বারে বারে আমারই ক্ষতি হয়।" এখানে ত্যাগী কর্মীদের জন্য তার অকৃত্রিম ভালবাসার নিদর্শন পাওয়া যায়। এ ভালবাসা তাকে বানিয়েছিল জননেতা।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে নিহতদের সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের লোক উল্লেখ থাকায় সরকারি গন-মাধ্যমে দু'জন ভারতীয় নাগরিক নিজেদের তৈরী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। আমরা সেদিন লাশগুলো তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থাও করতে পারিনি।
এঘটনার প্রায় দু'যুগ পর একদিন মহিউদ্দিন ভাই আমাকে তার শোয়ার ঘরে ডেকে নিয়ে বললেন, আপনাদের কিছু লোকের ঋণ আমি শোধ করে যেতে পারবোনা। হঠাৎ এসব কেন বলছেন জিজ্ঞাশা করলে তিনি বললেন, গত- কাল সন্ধা পাথর ঘাটায় এক বিয়েতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ হাতে শাখা পরা দুটি মেয়ে এসে আমাকে নমস্কার বলে আমার পা চুয়ে সালাম করল।
আমি তাদের মাথায় হাত রেখে বললাম,তোমাদেরকে চিনতে পারলামনাত। তারা অত্যন্ত ক্ষীণ কন্ঠে বলল,আংকেল আমরা সন্তোষ বাবুর মেয়ে। পরিচয় জেনে আমি মেয়ে দুটিকে আমার দু'পাশে বসালাম।তাদের কাঁধে হাত রেখে অনেকক্ষণ বসে রইলাম। কোন কথা বলতে পারলামনা। কথা বলতে গেলে আমি কান্না চেপে রাখতে পারতামনা। বলতে গিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমার নিজেরও বোবা -কান্না চেপে বসল। সন্তোষ-স্বপনদের মত শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আছে আজকের সরকার। সর্বস্তরের ক্ষমতাসীন নেতাদের এ সত্য উপলব্ধির সময় এসেছে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বালাখানা নয়। যুগে যুগে সত্য বলার উত্তমস্থান লালদিঘি ময়দান।
একটি অজানা কথা
১৯৮৭ সালের ০২ জানুয়ারি সকাল ০৭ টা। কেন্দ্রীয় সন্মেলন উপলক্ষে প্রয়াত মন্নান ভাই সহ আমরা ১০/১২ জন ঢাকা রাজার বাগের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলাম। সকাল বেলা মহিউদ্দীন ভাই আমাকে ঢেকে
ঘুম থেকে উঠালেন এবং বললেন দ্রুত বাইরে যাওয়র জন্য তৈরী হতে। তখনও বাকী সবাই ঘুমে। মহিউদ্দিন ভাই বৃহৎ আকারের কয়েকটি পরটা এবং সুজি হালুয়া এনে টেবিলে রেখে দিলেন যাতে ঘুম থেকে উঠে সবাই নাস্তা করতে পারেন
আমাকে নিয়ে রাস্তায় গিয়ে মোহাম্মদ পুর যাওয়ার জন্য একটি টেক্সি ভাড়া করলেন। মোহাম্মদপুর কোথায় যাবেন কেন যাবেন এসব কিছুই আমাকে বলেননি এবং আমিও কিছু জানতে চাইনি।
মোহাম্মদ পুরে গিয়ে এক বহুতল ভবনের সমনে গিয়ে টেক্সী থামল। মহিউদ্দিন ভাই ভবনের দোতলায় উঠলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম। বাসার কলিং বেল চাপতেই কাজের লোক এসে দরজা খুলে দিল। মহিউদ্দিন ভাই লোকটাকে বললেন, "তুমি গিয়ে সাহেবকে বল, চট্টগ্রামের মহিউদ্দি চৌধুরী এসেছে।
লোকটা চলে গেল,মূহুর্তের মধ্যে সাধা চেক লুংগী এবং লম্বা পান্জাবি পরিহিত যে ব্যাক্তি অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে
মহিউদ্দিন ভাইকে বুকে টেনে নিলেন তিনি আমাদের সকলের প্রিয় নেতা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের তদানিন্তন সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান। মহিউদ্দীন ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। কুশল বিনিময় চলছে এ সময় হঠাৎ নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে হাজির হলেন শ্রদ্ধাভাজন নেত্রী শহীদ আই,ভি,রহময়ন। মহিউদ্দি ভাই সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, "আপা এটা আপনি কি করলেন,আপনি নিজ হাতে আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসলেন "। উত্তরে তিনি (আই,ভি,রহমান) বললেন, আপনি যে মহিউদ্দীন ভাই, আমাদের শুধু নয় দেশের মানুষের প্রিয় নেতা।
ঘুম থেকে উঠালেন এবং বললেন দ্রুত বাইরে যাওয়র জন্য তৈরী হতে। তখনও বাকী সবাই ঘুমে। মহিউদ্দিন ভাই বৃহৎ আকারের কয়েকটি পরটা এবং সুজি হালুয়া এনে টেবিলে রেখে দিলেন যাতে ঘুম থেকে উঠে সবাই নাস্তা করতে পারেন
আমাকে নিয়ে রাস্তায় গিয়ে মোহাম্মদ পুর যাওয়ার জন্য একটি টেক্সি ভাড়া করলেন। মোহাম্মদপুর কোথায় যাবেন কেন যাবেন এসব কিছুই আমাকে বলেননি এবং আমিও কিছু জানতে চাইনি।
মোহাম্মদ পুরে গিয়ে এক বহুতল ভবনের সমনে গিয়ে টেক্সী থামল। মহিউদ্দিন ভাই ভবনের দোতলায় উঠলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম। বাসার কলিং বেল চাপতেই কাজের লোক এসে দরজা খুলে দিল। মহিউদ্দিন ভাই লোকটাকে বললেন, "তুমি গিয়ে সাহেবকে বল, চট্টগ্রামের মহিউদ্দি চৌধুরী এসেছে।
লোকটা চলে গেল,মূহুর্তের মধ্যে সাধা চেক লুংগী এবং লম্বা পান্জাবি পরিহিত যে ব্যাক্তি অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে
মহিউদ্দিন ভাইকে বুকে টেনে নিলেন তিনি আমাদের সকলের প্রিয় নেতা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের তদানিন্তন সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান। মহিউদ্দীন ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। কুশল বিনিময় চলছে এ সময় হঠাৎ নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে হাজির হলেন শ্রদ্ধাভাজন নেত্রী শহীদ আই,ভি,রহময়ন। মহিউদ্দি ভাই সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, "আপা এটা আপনি কি করলেন,আপনি নিজ হাতে আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসলেন "। উত্তরে তিনি (আই,ভি,রহমান) বললেন, আপনি যে মহিউদ্দীন ভাই, আমাদের শুধু নয় দেশের মানুষের প্রিয় নেতা।
স্মৃতিময় ঘটনা
১৯৮৭ সালের অক্টোবর মাসের কথা। সৈরাচার বিরোধী
গনতান্ত্রিক আন্দোলন চরম পর্যায়ে। আওয়ামীলীগ সহ
বিরোধী রাজনৈতিক দলের জেলা পর্যায়ের নেতাদের গনহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমাদের প্রিয় জননেতা এবিএম মহিউদ্দী চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম কারা -গারে আটক করে রাখা হয়। একদিন (তারিখ মনে নাই) সন্ধার কিছু সময় পর কারাগারে দায়ীত্বরত জনৈক হাবিলদার আব্দুল ওহাব (বাড়ী সন্দ্বীপ) দারুল ফজল মার্কেটস্থ আওয়ামীলীগ অফিসে এসে খবর দিল, পুর্ব রাতে মহিউদ্দীন ভাইকে আর্মির লোকেরা চট্টগ্রাম কারা গার থেকে নিয়ে গেছে।দু'দিন পর শিলেট আওয়ামীলীগ নেতা কামরান খবর পাঠাল, মহিউদ্দীন চৌধুরীকে সিলেট কারাগারে রাখা হয়েছে। এখবর শোনার পর আমি লিয়াকত ভাইকে বললাম, আস আমরা একটা পোষ্টার করি। পুরো পোষ্টার জুরে থাকবে মহিউদ্দীন ভাই এর ছবি।নীচে লিখা থাকবে মহিউদ্দীন চৌধুরী সহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি চাই। রাতের ভিতর তদানিন্তন সিগনেট প্রেসে পোষ্টার ছাপানো হল। (সে পোষ্টার এখনও অনেকের সংগ্রহে আছে।) পরদিন আশেক রসুল টিপু সহ লিয়াকত ভাই পোষ্টার নিয়ে সিলেট যান। সিলেট আওয়ামীলীগ কর্মীদের সহায়তায় রাতের মধ্যে শহরের প্রধান সড়ক সহ অলিতে গলিতে ব্যপকভাবে সে পোষ্টার লাগানো হয়। এটা তখনকার মহানগর আওয়ামীলীগ'র মহিউদ্দীন চৌধুরীর কর্মীদের কর্ম- কাণ্ডের সামান্য নমুনা। সে সময়ের নেতা কর্মীদের ত্যাগের ফসল আজকের আওয়ামীলীগ সরকার।
আমার রাজনীতির শিক্ষাগুরু
আমার আওয়ামীলীগ রাজনীতির শিক্ষাগুরু ছিলেন আজিজ ভাই। উনসত্তর সালের শুরুর দিকের কথা। আমি তখন সন্দ্বীপ কার্গিল
হাই স্কুলেের শিক্ষক। একদিন সন্দ্বীপ ডাক বাংলায় গভীর রাতে একান্তে বসে আজিজ ভাই আমর সাথে ঐতিহাসিক ছয় দফার মৌলিক বিষয়ে নিয় আলোচনা করেন। আমি সেদিনই আমি বুঝতে পেরছিলাম, ছয়- -দফার মধ্যে লুকিয়ে আছে বাংলার স্বাধীনতার বীজ। এসব এখন কেবলই স্মৃতি। আজিজ ভাইকে নিয়ে আমার জীবনে সন্দ্বীপের বহু স্মৃতি রয়েছ। অন্য কখনও তার বিস্তারিত লিখতে চেষ্টা করব।
১৯৭০ সাল। সন্দ্বীপ থানা আওয়ামীলীগ'র প্রথম পুর্নাঙ্গ দ্বিবার্ষিক সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আজিজ ভাই ছিলেন
সন্মেলনের প্রধান অতিথি। সন্মেলন শেষ চট্টগ্রাম এসে তিনি স্বহস্ত আমাকে একখানা চিঠি লিখেছিলেন। সে চিঠির কথাগুলো আজও আমাকে রাজনৈতি দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। চিঠির অংশ বিশেষ উল্লেখ করছি : "-----------------গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আমাদের দল। যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ বা মতান্তর হতে পারে।
কিন্তু সে মান্তর যাতে মনান্তরে পরিণত না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। আনি আশা করি সন্দ্বীপ থানা আওয়ামীলীগকে এক পরিবার হিসেবে কাজ করার দায়ীত্বটুকু আপনি পালন করবেন। ---------" আজিজ ভাই এর আদেশ আজও আমার রাজনৈতিক জীবনের পাথেয় হয়ে আছে। সত্তর'র নির্বাচনোত্তর স্থানীয় জাম্বুরী মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় আজিজ ভাই এর সাথে আমার শেষ দেখা হয়। এখানে আজিজ ভাই বক্তৃতার এক পর্যায়ে তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলছিলেন : "ছয় দফা না মানলে এক দফা কায়েম হবে - এক দফা।"
মনে রাখতে হবে দেশের মানুষ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে দেশকে দুই ভাগ করে দিয়েছে।পশ্চিম পাকিস্তা- নের ভোটারররা পুর্ব পাকিস্তানের কোন প্রর্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেনি। একই ভাবে পুর্ব পাকিস্তানের
ভোটাররা পশ্চিম পাকিস্তানের কোন নেতাকে তাদের সাংসদ নির্বাচিত করেনি। তার পরও আমরা দেশের অখণ্ডতা বজায় রাখতে চাই। ছয় দফা না মানলে পুর্ব বাংলার মানুষ এক দফা কায়েম করবে- এক দফা।
চলবে
তথ্য সংগ্রহ : Wikimedia ও এ কে এম বেলায়েত হোসেন’র বিভিন্ন লিখা থেকে।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.