Header Ads



এম এ আজিজের সঙ্গে সরাসরি রাজনৈতিক ভাবে জড়িয়ে পড়েন আবদুল্লাহ আল হারুন-হাসান মনসুর

 

এম এ আজিজের সঙ্গে সরাসরি রাজনৈতিক ভাবে জড়িয়ে পড়েন আবদুল্লাহ আল হারুন

সাবেক গণপরিষদ সদস্য, ভাষা সৈনিক আবদুল্লাহ আল হারুন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী

চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান মরহুম আবদুল্লাহ আল হারুন এই জনপদে অতি পরিচিত একজন সজ্জন মানুষ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।

তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিক নেতা। গন মানুষের পরম বন্ধু। প্রচলিত অর্থ এবং পেশী নিয়ন্ত্রিত অস্থির রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে - তিনি ছিলেন আদর্শ নির্ভর, প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক।

সৎ, ত্যাগী, আপোষহীন ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিকের উজ্জ্বল উদাহরণ আবদুল্লাহ বল হারুন চৌঃ। নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে - সুবিধা নেওয়ার প্রচলিত ধারার বিরুদ্ধে তিনি আদর্শকে ধারন করে রাজনীতি করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার পর আওয়ামীলীগের চরম দুঃসময়েও তিনি মুজিব আদর্শ থেকে সরে যান নাই। তিনি ছিলেন লেখাপড়া জানা উদার মনোভাবের প্রগতিশীল নেতা। এই মহান রাজনীতিবিদ ১৯৩৩ সালে রাউজান থানার গহিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুসলিম ছাত্রলীগের জনসভায় তরুন আবদুল্লাহ আল হারুন সভা মঞ্চের খুব কাছেই বক্তব্য শুনছিলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন জননেতা এম এ আজিজ, তিনি তাঁকে দেখে কাছে ডেকে নেন এবং তাঁর সাথে হ্যান্ডসেক করে কুশল জিজ্ঞেস করেছিলেন। জীবনে এই ছোট এক ঘটনা তার জীবনে তকমা লাগিয়ে দেন - তাকে খ্যাতিমান রাজনৈতিক হিসেবে, জড়িয়ে পড়েন মায়ার বন্ধনে ।

মধ্যে ভবিষ্যতের নেতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলেন।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এম এ আজিজের সঙ্গে সরাসরি রাজনৈতিকভাবে জড়িয়ে পড়েন আবদুল্লাহ আল হারুন।জনাব আবদুল্লাহ আল হারুন ১৯৫০ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন।আবদুল্লাহ আল হারুন প্রগতিশীল মন মানসিকতার কারনে প্রথম থেকেই মুসলিম লীগ বিরোধী ছিলেন -সে কারণে কলেজে তাঁর একটা ভাবমূর্তি গড়ে উঠে আধুনিক মন মানসিকতা সম্পন্ন ছাত্রনেতা হিসেবে

তিনি ছিলেন ভাষা সৈনিক। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে - তিনি চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৬ সালে তিনি তৎকালীন জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি মরহুম এম এ আজিজের সাথে গিয়ে – চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থানরত - পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাথে সরাসরি দেখা করে - আওয়ামীলীগে যোগদান করেন।

১৯৬৬ সালে জেএমসেন হলে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।তিনি ১৯৬২-৬৬ সালে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।১৯৬৮ সালে আবদুল্লাহ আল হারুন জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবসহ সকল আসামির মুক্তির দাবিতে পরিচালিত আন্দোলনে তিনি সংগ্রামী ভুমিকা পালন করেন।

১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও সকল বন্দি মুক্তি লাভ করেন।মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা আয়োজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন আবদুল্লাহ আল হারুন।

চট্টগ্রামের রাউজানের জাঁদরেল দেশ বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন মুসলিম লিগার ফজল কাদের চৌধুরী। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে এই কুখ্যাত ফ,কা চৌধুরীর পরাজয়ের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন আবদুল্লাহ আল হারুন।সেই নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন; তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন দৈনিক আজাদি সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ।মুক্তিযুদ্ধে - জনাব আবদুল্লাহ আল হারুনের অবদান অসামান্য। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সক্রিয় সংগঠক ছিলেন।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান “বাকশাল” কায়েম করলে তিনি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত করেন।৭৫’র ১৫ আগস্ট দুর্বৃত্তরা বঙ্গবন্ধুকে পরিবার হত্যা করলে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হলে তিনি সেই কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৪ সালে পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন।সামরিক সরকারের চোখ রাঙ্গিয়ে এই দায়িত্ব পালন করা রীতিমতো বীর পুরুষের কাজ ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ’৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে আবদুল্লাহ আল হারুন “দৈনিক স্বাধীনতা” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে তার সাহিত্য প্রীতি আর সৃজনশীলতার পরিচয় দেন।

বাঙালি সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে তিনি আমৃত্যু কাজ করে গিয়েছেন। ছিলেন স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে পুরোধা এক নিবেদিতপ্রান রাজনৈতিক সংগঠক। ১৯৭৫ সালের পর রাউজান এলাকায় স্বৈরাচার জিয়া এরশাদের আশীর্বাদে মুসলিম লীগের নেতা রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাউজানে খুনের আর ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিলেন , তিনি সেইশময় এই এলাকায় পালন করেছিলেন ত্রাণকর্তার ভুমিকা। আওয়ামীলীগের হয়ে রাউজান সংসদীয় আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন নৌকার , যদিও ভোট ডাকাতি আর সন্ত্রাসের কারনে ফলাফল তার অনুকুলে আসেনি সেই ।

সার্বক্ষণিক রাজনীতির মানুষ হলেও আবদুল্লাহ আল হারুন ছিলেন সাহিত্য প্রেমী , সংস্কৃতিসেবী। সক্রিয় রাজনীতি থেকে তিনি সরে আসেন ২০০০ সালের প্রথম দিকেই। অবসর নেয়ার পর তিনি যুক্ত থাকতেন মুক্ত বুদ্ধি চর্চার বিভিন্ন উৎসবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী মেলা পার্বণ আয়োজন অনুষ্ঠানে।

তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএসটিসি)-এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন। তার সুযোগ্য কন্যা Shamima Lubna - তিনি তার সংগ্রামী পিতার আদর্শকে ধারন করে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্রবস্থায়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন । জননেত্রী সেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের সুফল অবহেলিত নারী সমাজের কাছে পৌঁছে দিয়ে নিরলস পরিশ্রম করছেন এই মেধাবী , পরিশ্রমী নারী নেত্রী লুবনা। ২০০৪ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর এই ক্ষণজন্মা বীর পুরুষ আকস্মিকভাবে পরলোকগমন করেন।মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুণ , আমিন ।

হাসান মনসুর-সাঃ সম্পাদক (সাবেক) কোতোয়ালী থানা আওয়মী লীগ,
চট্টগ্রাম মহানগর।

কোন মন্তব্য নেই

please do not enter any spam link in the comment box.

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.