জনদরদী,জননেতা,কিংবদন্তী রাজনীতিক,চট্টলবীর আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
রাজনীতি ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের জননেতা হয়ে ওঠার সৌভাগ্য সকলের হয়ে ওঠে না। কিন্তু, এক্ষেত্রে আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
চট্টলবীর আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে জনদরদী, জননেতা, কিংবদন্তী রাজনীতিক, চট্টগ্রামের মুকুটহীন সম্রাট, চট্টগ্রামের অভিভাবক বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত সফল মেয়র যে নামেই আমরা তাঁকে ডাকিনা কেন তাতে তাঁকে পুরো হয়তো পাওয়া যাবে না!
ষাটের দশকে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে যুক্ত হন ছাত্রলীগের সাথে।
তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরবর্তীতে বন্দীদশা থেকে পাগল সেজে কৌশলে পালিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু, তাঁর এই রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেছিলেন গণমানুষের নয়নমণি।
চাটগাঁ'র রাজনীতিতে বহুল প্রচারিত- 'ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়' কথাটি সত্যিকারভাবেই যেন পূর্ণতা পেয়েছিল তাঁর কর্মে। আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো লোকের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে আর আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলের কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে গণমানুষের পক্ষে কথা বলার লোকতো প্রায় নেই বললেই চলে।আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন সেই হাতেগোনা ব্যতিক্রমীদের একজন। যেখানেই চট্টগ্রামবাসীর দাবি উপেক্ষিত হয়েছে, সেখানেই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি, সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে গিয়ে নিজ দলীয় সরকারের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে পিছপা হননি তিনি।
আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে কারও কারও মতভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু চট্টগ্রামের উন্নয়ন এবং সরকার হতে নগরের সুবিধা আদায়ের ব্যাপারে তিনি যে ছিলেন আপোষহীন, তা অস্বীকার করবে কে? বাগ্মিতা ব্যক্তি আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর একটি অনন্য দিক। তাঁর রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তো বটেই, চাটগাঁ'র সাধারণ মানুষও ছিলেন তাঁর কথার মুগ্ধ শ্রোতা।
রাজনীতি ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের জননেতা হয়ে ওঠার সৌভাগ্য সকলের হয়ে ওঠে না। কিন্তু,এক্ষেত্রে আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। মনে পড়ছে তাঁর মৃত্যুর পর যখন আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে আনা হয়, তখন চারিদিকে ছিল শুধুই মানুষের স্রোত। শুধু প্রিয় নেতা ও অভিভাবক হারিয়ে দল-মত ছাপিয়ে সকলের চোখ ভাসিয়ে জল,কেউ গুমরে কেঁদেছেন,কেউবা হাউমাউ করে কেঁদেছেন,সেদিন কেঁদেছে বুঝি লালদীঘি ময়দানও! বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রিক বাংলাদেশে চট্টগ্রামের স্বার্থটা এমনিতেই উপেক্ষিত।
আমাদের নগরের যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে বলার মতো খুব হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে উচ্চকিত একজন, আজ তিনি নেই। এ বেদনা, এ শূন্যস্থান কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়।
চট্টলবীর আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জড়িয়ে আছেন এবং থাকবেন চাটগাঁর গণমানুষের হৃদয়জুড়ে। তাঁর স্বপ্ন ছিল চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং এটা কেবল শুধু নিছক চাওয়া ছিলনা। বরং তার জন্য তিনি তাঁর পুরো জীবন নিঃশেষ করেছেন। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে নিঃস্বার্থভাবে চট্টগ্রামের বিপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি যার মধ্য দিয়ে দিয়ে রাজনীতি ছাপিয়ে আমরা ব্যক্তি মহিউদ্দিনের মানবিকতার পরিচয় পাই। মনে পড়ছে, '৯১ এর প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়, বন্দরটিলার ঘটনা সহ যে কোন নাগরিক সমস্যায় চাটগাঁবাসী মুহূর্তেই পাশে পেয়েছিলেন তাঁদের প্রিয় আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা ও তাঁর প্রতিটি কাজের মধ্যে আমরা পেয়েছিলাম চট্টগ্রামের মর্যাদা রক্ষায় তীক্ষ্ম, সজাগ, দূরদর্শী এক ত্যাগী নেতা ও মানুষকে। আজকে আমাদের ভাবনার সময় এসেছে, আমরা ক'জন মহিউদ্দিন চৌধুরী'র এই চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের জনগণ আর সর্বোপরি দেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসা দেশপ্রেমকে নিজেদের মাঝে স্থান দিতে পেরেছি? বর্তমানে আমরা একটি অসহিষ্ণু সমাজে বাস করছি, যেখানে ভালো রাজনীতিকের সংখ্যা দ্রুতই কমছে।
সমাজ আর রাষ্ট্র আজ বিভিন্নভাবে জরাগ্রস্ত। এমন সময়ে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো পরোপকারী ও জনদরদী রাজনীতিবিদের ছিল ভীষণ প্রয়োজন। আজ বড় অসময়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন তিনি। তবে পরপারে ভালো থাকুন প্রিয় নেতা আপনি,আপনার জন্য রইল আমাদের শ্রদ্ধা আর উজাড় করা ভালোবাসা।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.