জিরি মাদ্রাসা আক্রমণ করে রাইফেল-বুলেট উদ্ধার করি-বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদাউছ ইসলাম খান।
২ ডিসেম্বর শাহচান্দ আউলিয়া মাদ্রাসা থেকে একজন মাওলানাকে নিয়ে পটিয়া থানায় মিলাদ মাহফিল আয়োজন করে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তিনি উত্তোলন করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদাউছ ইসলাম খান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে বলেন, ১৯৭১ সালে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পাক-বাহিনী চট্টগ্রাম দখলে নিলে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের নির্দেশে নিজ গ্রাম বরকলে চলে যান। তৎকালীন চেম্বার অব কমার্সের প্রধান হিসাব রক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান ইসলামাবাদীর নেতৃত্বে একটি বাহিনী গঠন করেন। তিনি সেই বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে ডেপুটি কমান্ডার (অপারেশন) হিসেবে দায়িত্ব পান। দায়িত্ব নিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পার্শ্ববর্তী বৈলতলী লাইলার দোকান এলাকার শান্তি কমিটির কমান্ডার মাওলানা শফির ঘরে হামলা দিয়ে তাকে মেরে একটি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করেন।
একই
সপ্তাহে পার্শ্ববর্তী পীরখাইন এলাকায় সামশুদ্দীনের ঘরে আক্রমণ করে একটি বন্দুক উদ্ধার
করেন,
তবে সে পালিয়ে যায়। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ
ও অস্ত্র নিয়ে আসা পটিয়ার আসলাম ও রফিকের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারা শাহজাহান ইসলামাবাদী
টিমের জন্য ৫টি রাইফেল ও ১ হাজার বুলেট দেয়। পরবর্তীতে পটিয়া গৈড়লার পোস্টমাস্টার আহমদ
হোসেন ও ক্যাপ্টেন করিম তাদের সাথে যুক্ত হয়ে খরচের জন্য প্রায় ২০ সের ওজনের ৪ আনা, ৮ আনা মূল্যের পয়সা দেন।
তিনি আরো বলেন, শাহজাহান ইসলামাবাদী প্রথমে ১০ জন নিয়ে গ্রুপ গঠন করার পর এক
পর্যায়ে গ্রুপে ২শ’ জনে উন্নীত হয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহে পটিয়ার কেলিশহরে অবস্থানরত
ভারত থেকে আসা অজিত এবং হামিদসহ গ্রুপের ১৫ জনকে তাদের অস্ত্রসহ চন্দনাইশে বরকলে নিয়ে
আসেন তিনি। তাদেরকে নিয়ে জুনের মাঝামাঝি ভোররাতে সার্জেন্ট মহি আলমের নেতৃত্বে আনোয়ারা
থানা আক্রমণ করেন। এসময় থানায় ত্রিমুখী আক্রমণ করার সময় এক গ্রুপের নেতৃত্বে হাবিলদার
আবু মো. ইসলাম, অন্য গ্রুপের পীরখাইনের সার্জেন্ট
নুরুল আলম, অপর গ্রুপের সার্জেন্ট আবদুস ছবুর
দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নুরুল আলমের গ্রুপের থেকে তৎকালীন আনোয়ারা সিও অফিস আক্রমণ
করেন।
আনোয়ারা থানা থেকে ৮৮টি রাইফেল ও ১০ হাজার বুলেট
পান,
৪ জন বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যকে আটক করে নিয়ে এসে তাদেরকে গ্রুপভুক্ত
করা হয়। আগস্টের মাঝামাঝি ক্যাপ্টেন করিমের সহযোগিতায় তারা পটিয়া জিরি মাদ্রাসা আক্রমণ
করে সেখান থেকে ২২টি রাইফেল, ১০ হাজার বুলেট উদ্ধার
করেন। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মহসিন গ্রুপ ও শাহাজাহান গ্রুপের যৌথ অভিযানে আনোয়ারা
থানায় দ্বিতীয় অপারেশনে ২টি এলএমজি, ৯০টি রাইফেল ও ১০ হাজার বুলেট উদ্ধার করেন।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আতাউর রহমান খানের চিঠি
পেয়ে তাদের গ্রুপ প্রধান শাহজাহান ইসলামাবাদী, মুরিদুল আলম, ফরিদুল আলম, মোজাহেরুল ইসলাম, একটি এলএমজি, একটি এসএলআর ও একটি
রিভলভারসহ নৌকাযোগে বাঁশখালী বদরখালীর দিকে যাওয়ার পথে রাজাকারদের হামলায় মুরিদুল আলম
ও ফরিদুল আলম শহীদ হন।
কচুয়াই মিয়া ফারুকীর চিঠি নিয়ে ৭ জন
রাজাকার তাদের অস্ত্রসহ শ্রীমাই ব্রিজ এলাকায় তার সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে অস্ত্র সারেন্ডার
করে তাদের গ্রুপে যোগদান করেন। ২ ডিসেম্বর শাহচান্দ আউলিয়া মাদ্রাসা থেকে একজন মাওলানাকে
নিয়ে পটিয়া থানায় মিলাদ মাহফিল আয়োজন করে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তিনি উত্তোলন
করেন।
এসময় শাহজাহান ইসলামাবাদী গ্রুপের অনেক সদস্য উপস্থিত
ছিলেন। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আনোয়ারার গোবাদীয়ার চরে আটকে পড়া ট্রলার থেকে ফজলুল
কাদের চৌধুরী, তার স্ত্রী, ছোট ছেলে গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরীকে আটক করে রুস্তমহাটে নিয়ে
যায়।
এ সময় ভুটানিয়ান বাহিনী তাদের থেকে
ওদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে মেরিন একাডেমিতে আটক করে রাখে। দেশ স্বাধীন হলে তারা তাদের অস্ত্র
চট্টগ্রাম কলেজের মাঠে ক্যাপ্টেন এনামুলের হকের মাধ্যমে মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের
হাতে জমা দেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের মধ্যে যারা এখনো বিদেশে অবস্থান করছে তাদেরকে
রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশে এনে তাদের শাস্তি কার্যকর করার দাবি জানান। একই সাথে ২১ আগস্টের
গ্রেনেড হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করেছেন তিনি।
পূর্বকোণ
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.