বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং আমি-একেএম বেলায়েত হোসেন।
![]() |
এ কে এম বেলায়েত হোসেন |
কিশোর কালেই মুসলিমলীগ এবং এ দলের নেতা কর্মীদের প্রতি আমার অন্তরে চরম ঘৃনা এবং দ্রোহের সৃষ্টি হয়।
১৯৫৮ সাল। আমি তখন সন্দ্বীপ কাটগর গোলাম নবী হাই স্কুলে'র নবম শ্রেণীর
ছাত্র। স্বশিক্ষিত পিতা-মাতার সন্তান আমি। লুঙ্গি শার্ট পরে চার কিলোমিটার রাস্তা পায়ে
হেটে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হতো। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার জেষ্ঠ পুত্র গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী
ছিলেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সম্পাদক। প্রধান শিক্ষক ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বাবু কলি-
প্রসন্ন দাস। স্কুলের তাবত উন্নয়নমুলক কাজ
প্রধানশিক্ষক মহোদয় তার নিজের তত্বাবধানে করতেন। এসব বিষয় নিয়ে সম্পাদকের সাথে প্রধান শিক্ষক'র মানষিক দ্বন্ধ স্নায়ু
যুদ্ধের রুপ নিয়ে ছিল। প্রয়াত গিয়াসউদ্দিন
চৌধুরী এক নাগারে দুই যুগ ধরে স্থানীয় ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তিনি মুসলিমলীগের রাজনীতির প্রতিনিধি ছিলেন। এবছর কাটগর ইউনিয়ন বোর্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সে নির্বাচনে মুসলিমলীগ সমর্থিত প্যানেলের সহিত উত্তর সন্দ্বীপ সমাজ কল্যান সমিতি সমর্থিত
প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। আমাদের শ্রদ্ধেয়
প্রধান শিক্ষক বাবু কালিপ্রসন্ন দাস সঙ্গত কারণে এলাকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সমর্থিত নতুন
দলের পক্ষ নেন।প্রতি প্যানেলে প্রার্থী সংখ্যা ছিল এগারোজন।প্রেসিডেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রতি ওয়ার্ড তিনজন করে মোট
নয়জন মেম্বার। প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় কালি বাবুর পরামর্শে বিদ্যালয়ের নেতৃস্থানীয় ছাত্ররা নতুন দলের সমর্থনে
নির্বাচনী প্রচার কাজে প্রকাশ্যে অংশ গ্রহণ করে। ছাত্রদের নেতৃত্ব দেয়া হয়েছিল আমাকে।
মুলতঃ ছাত্রদের তীব্র বিরোধী প্রচারনার কারনেই জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠে এবং জনগণের
দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ
ঘটে।
মুসলিমলীগ গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী এবং তাঁর এগারজনের পুর্ণ প্যানেল বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজয়
বরণ করে। এনির্বাচন সেই কিশোর বয়সেই আমাকে দিয়েছে নেতৃত্বের স্বাধ সাথে সাথে এলাকার
জনগণের অকৃত্রিম স্নেহ ভালবাসা। কিন্তু তখনো
বুঝতে পারিনি সামন্তবাদী মুসলিমলীগের কত ভয়ংকর নিষ্ঠু -রতম কষাঘাত আমার জন্য
সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। যে আঘাতের মাধ্যমে আমার জীবনকে তছনছ, ছিন্নভিন্ন করে দিবে।
আমার কিশোর জীবনে নেমে আসবে ঘন কুয়াশা, নিকষ কালো অন্ধকার। নির্বাচনে নতুন দলের জয়লাভে এলাকায় সকল মানুষের
মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় । উত্তর সন্দ্বীপ জনকল্যাণ সমিতি এক গন সম্বর্ধনা সভার
আয়োজন করে। কাটগর ইসলামিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত সম্বর্ধনা সভায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে আমাকেও
বিশেষভাবে সম্বর্ধিত করা হয়।
সম্বর্ধনা সভার শুরুতে আমাকে আমার রচিত এবং আমার সুরে গাওয়া একটি নির্বাচনী
গান পরিবেশনের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। বাধ্য হয়ে আমি গানটি পরি- বেশন করতে সম্মত
হই। গানের প্রথম কলি --"মোয়াজ্জেম মিয়া হবেন প্রসিডেন্ট আজহার মিয়া তার সাথী,
নতুন দলে ভোট দাও এবার সৎ পথে থাকি----গাওয়ার সাথে সাথে মাঠ উপস্থিত ছেলে বুড়ো সকলে
হেলে দুলে নৃত্য তালে করতালি দিয়ে গানটি উপভোগ করছিল।মনে হচ্ছিল আমার বক্তৃতা এবং গান
ছিল নির্বাচন বিজয়ের মেগনাকার্টা ।
সমিতির পক্ষ থেকে আমাকে রৌপ্য পদকে ভুষিত করা হয়। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ
করা প্রয়োজন।নির্বাচনের পর প্রধান শিক্ষক মহোদয় স্কুল কম্পাউন্ডে তাঁর নিজ বাস- স্থানের
পার্শ্বের একটি কক্ষে আমার থাকার ব্যবস্থা করেন। আমার স্কুল কম্পাউন্ডের বাইরে আসা-যাওয়া
তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। আমার সকাল- বিকালের নাস্তা তাঁর বাসা থেকে সরবরাহ করা হতো।
দুপুর এবং রাতের খাবার নব নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আজহারুল হক মাষ্টার সাহেবের
বাসা থেকে সরবরাহ করা হতো। ভাইস প্রেসিডেন্ট সাহেবের ছোট ছেলে স্কুল ছাত্র মন্জুরুলহক
হেলাল ( পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক) খাবার নিয়ে আসতো। প্রথমে
না বুঝলে ও পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার ব্যক্তিগত নিরাত্তার জন্য শ্রদ্ধেয় প্রধান
শিক্ষক এসমস্ত ব্যবস্থা করেছিলেন।
কাটগর ইউনিয়নের এবিজয় আনন্দের ঢেও পার্শ্ববর্তী সন্তোষপুর ইউনিয়নেও ধাক্কা
দেয় । কয়েকদিনের ব্যবধানে পার্শ্ববর্তী সন্তোষপুর ইউনিয়নে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা
হয়।নির্বাচনে অন্যতম প্রার্থী প্রয়াত শামসুদ্দিন আহমেদ এর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার কার্য পরিচালনার জন্য তাঁর বড়
ছেলে আমাদের সিনিয়র ভাই প্রয়াত জাহাঙ্গীর মিয়া বিষেশ ভাব অনুরোধ করেন। শ্রদ্ধেয় প্রধান
শিক্ষক কালি বাবু আমাক সার্বক্ষণিক নজরে রাখার জন্য জাহাঙ্গীর মিঁয়াকে দায়ীত্ব দিয়ে
আমাকে তার সাথে যাওয়ার অনুমতি দিলেন । সন্তোষপুর
ইউনিয়ন বোর্ডের নির্বাচন ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা- পুর্ণ। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান
ঘটিয়ে নির্বাচনে প্রয়াত শামসুদ্দিন আহমেদ নিয়া বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক
তাঁর স্ত্রী-সন্তান
-দের রেখে ১৫/২০ দিনের জন্য কলকায় গেলেন। বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হল। সেদিন
ছিল অংকের পরীক্ষা। সিনিয়র শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ইলিয়াস মিয়া হল সুপারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ধর্মীয় শিক্ষক সেরাজুল মাওলা এবং স্পোর্টস
টিচার শামসুল আলম ( তিনি নির্বাচনে পরাজিত
মুসলিম- লীগ সমর্থিত প্যানেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী ছিলেন) পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরীক্ষা
প্রথম ঘন্টা শেষ হ্য়েছে। লক্ষ্য করলাম জনাব
শামসুল আলম মাষ্টার আমার আসেপাশে ঘুরা ঘুরি করছেন। তখনও বুঝতে
পারিনি আমার বিরুদ্ধে কত ঘৃন্যতম নোংরা ষঢযন্ত্রের জাল ফেলেছেন পরম শ্রদ্ধেয়
শিক্ষা-গুরু খেলার মাঠের খেলারী শামসুল আলম। আল্লাহপাক তাকে জান্নাত নসিব করুন।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.