সমালোচনার জবাব দিতে হবে যুক্তি দিয়ে’ ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল
আমাদের খুঁজে দেখতে হবে তরুণরা চরমপন্থা কিংবা জঙ্গিবাদের দিকে কেন ঝুঁকছে ?
উগ্রতা
নয়, যুক্তি এবং সুস্থ বিতর্কের মধ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রতিষ্ঠার
জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনলাইন কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তরুণ রাজনীতিক
ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। একইসঙ্গে রাজনীতির বর্তমান অচলায়তন ভেঙে
আদর্শ চর্চার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক কর্মীকে সমাজে নিজেকে অনুকরণীয় করে তোলার কথাও
বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার
(০৪ আগস্ট) চট্টগ্রামে এক সেমিনারে তিনি বলেছেন, অনলাইনে-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
কথা বলতে হবে, সমালোচনার জবাব দিতে হবে যুক্তি দিয়ে। অবশ্যই বিতর্ক হবে, তবে সেটা
সুস্থ বিতর্ক। উগ্রতা দিয়ে, গায়ের জোরে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করা যায়না।
‘অনেকে বলেন ব্লগাররা ধর্মের সমলোচনা করেন, ধর্মের বিরুদ্ধে
কথা বলেন। কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলবে বলে তার মৃত্যু অবধারিত, এটা বিশ্বাস করার
কোন যুক্তি নেই। ধরুন, কেউ অনলাইনে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মের সমালোচনা
করছে, তো এখানে আমাদের দায়িত্বটা কি হবে ?
‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যুক্তির মধ্য দিয়ে সেই সমালোচনার
জবাব দিতে হবে। তার সমালোচনাটাকে যদি যুক্তি আর সুস্থ বিতর্ক দিয়ে আমি মিথ্যা
প্রমাণ করতে পারি সেটাই হবে আমার জয়। আমরা ধর্মের কথা বলব, অবশ্যই বলব। আবার
আমাদের বাপ-দাদারা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের যে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল
বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন সেটাকে ধরে রাখতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা অনলাইনেও ছড়িয়ে
দিতে হবে। ’
তিনি
বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সমাজে অসহিঞ্চু একটা পরিবেশ তৈরি হচ্ছে,
আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেটা প্রতিরোধ করতে হবে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনলাইন
একটিভিস্ট আছি, তাদেরকেই। ’
আধুনিক
তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মীদের দলীয় প্রচারণা শীর্ষক এই সেমিনারে সাবেক
মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান নওফেলের বক্তব্য শুনতে হাজির হন প্রায় চার’শ তরুণ যাদের মধ্যে প্রায় সবাই বিভিন্ন
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জাতীয় সঙ্গীত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানসহ
শোকের আগস্টে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সেমিনার
সঞ্চালনা করেন তরুণ রাজনীতিক হাসান মনসুর।
সেমিনারে
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের আগে নওফেল জানালেন, এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। শীঘ্রই
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনলাইন একটিভিস্টদের নিয়ে ‘অনলাইন স্বেচ্ছাসেবী‘ তৈরি করে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রগতিশীল ও কর্মমুখী প্রচারণা শুরু করার কথাও জানিয়েছেন
নওফেল।তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাজনীতি এখন আগের জায়গায় নেই। রাজনীতি কখনও
জীবনধারনের, আয়-উপার্জনের ব্রত হতে পারেনা। অথচ এখন অনেক ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছে।
আপনার
আয়ের পথ আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে। আপনার জীবনধারণের পথ আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে।
এজন্য রাজনীতিকে জিম্মি করে ফেলা চলবে না। এটা কোন আদর্শিক পথ নয়। এই রাজনীতির
বৃত্ত ভাঙতে হবে। এই অচলায়তন ভাঙতে হবে।
তরুণদের
উদ্দেশ্যে নওফেল আরও বলেন, যদিও এটা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, তবুও হয়ত আপনাদের
মধ্যে অনেকেই ছাত্রলীগ কর্মী আছেন। আপনি ছাত্রলীগ নেতা কিংবা কর্মী, আপনার
ব্যক্তিগত অর্জন কি ? সমাজে আপনার অবস্থান কি ? আপনার পরবর্তী প্রজন্ম আপনাকে কেন
অনুকরণ করবে ?
একজন
শিবির নেতাকে যখন তরুণরা দেখবে সে লেখাপড়া করে ইসলামি ব্যাংকের জিএম হয়ে গেছে তখন
তরুণরা তো তার দিকেই ঝুঁকবে। তারা তো জামায়াত-শিবির আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির
দিকেই ঝুঁকবে। আপনি (ছাত্রলীগ) তো প্রতিষ্ঠা পাননি, আপনার দিকে কেন আসবে ?’ বলেন
নওফেল।
তিনি
বলেন, এজন্য সমাজে আপনাকে (ছাত্রলীগ) প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। ব্যবসা করলে ব্যবসায়ী
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোন, টু-পাইস কামানোর চিন্তা করে লাভ নেই। রাজনীতি করুন,
পাশাপাশি নিজেকে সমৃদ্ধ করুন। নিজেকে এমনভাবে তুলে ধরুন যাতে তরুণরা আপনাকেই
অনুকরণ করে, আপনার দিকেই ঝুঁকে।
নওফেল
বলেন, শিবির চারদিকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার
সাহস এবং দৃড়তা না থাকলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে
যেত। এমনকি দেশও ধ্বংস হয়ে যেত।
তিনি
বলেন, আমাদের খুঁজে দেখতে হবে তরুণরা চরমপন্থা কিংবা জঙ্গিবাদের দিকে কেন ঝুঁকছে ?
একসময় যখন দেশে বাম রাজনীতি তুঙ্গে ছিল তখনও অনেক তরুণ চরমপন্থার নামে সর্বহারার
দিকে ঝুঁকেছিল। এখন মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে। এটা প্রতিহত করতে হবে।
‘আমরা
যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনলাইন একটিভিস্ট, আমাদের ন্যায়ভিত্তিক, নারী-পুরুষের
সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়
থাকব, অনলাইনে থাকব কিন্তু ইসলামিক স্টেট এর কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে চরমপন্থায় ঝুঁকে
পড়ব, এটা হতে পারবেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হবে আমাদের
অনলাইন কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি। ’ বলেন নওফেল।
নগরীর
চশমাহিলে মহিউদ্দিনের বাসভবনে আয়োজিত সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন একেএম বেলায়েত
হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার
সাইমুল চৌধুরী, সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্জিনা আখতার।
সেমিনারের
দর্শকসারিতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।৫ আগস্ট ২০১৬
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.