সূরা আন-নাসর-আল-ইখলাস-আল-ফালাক-আন-নাস এর বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখা।
সূরা আন-নাসর-আল-ইখলাস-আল-ফালাক-আন-নাস
সূরা আন-নাসর
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ
১. যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যায় এবং বিজয় লাভ হয়
*এ ব্যাপারে প্রায় সকলেই একমত যে, এখানে বিজয় বলে মক্কা বিজয় বোঝানো হয়েছে। আল্লাহর সাহায্য অর্থ হল, ইসলাম এবং মুসলিমদের কুফর ও কাফেরদের উপর বিজয় দান। আর বিজয় অর্থ হল, মক্কা বিজয়। মক্কা মহানবী (সাঃ)-এর জন্মভূমি এবং বাসস্থান ছিল। কিন্তু সেখান হতে তাঁকে এবং তাঁর সাহাবাগণ (রাঃ)-কে কাফেররা হিজরত করতে বাধ্য করেছিল। সুতরাং যখন ৮ হিজরীতে এই মক্কা নগরী বিজয় হল তখন লোকরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে লাগল। অথচ এর পূর্বে এক-দুজন করে মুসলমান হত। মক্কা বিজয়ের পর মানুষের নিকট এ বিষয়টি পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে উঠল যে, তিনি আল্লাহর সত্য পয়গম্বর এবং ইসলামই হল সত্য ধর্ম; যা অবলম্বন ব্যতীত পরকালে পরিত্রাণ সম্ভব নয়।
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
২, আর ( হে নবী) তুমি (যদি দেখ যে লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দীন গ্রহণ করছে
*অর্থাৎ লোকদের একজন দু’জন করে ইসলাম গ্ৰহণ করার যুগ শেষ হয় যাবে। তখন এমন এক যুগের সূচনা হবে যখন একটি গোত্রের সবাই এবং এক একটি বড় বড় এলাকার সমস্ত অধিবাসী কোন প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ ও চাপ প্রয়োগ ছাড়াই স্বতস্ফূৰ্তভাবে মুসলিম হয়ে যেতে থাকবে। মক্কা বিজয়ের পূর্বে এমন লোকদের সংখ্যাও প্রচুর ছিল, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেসালত ও ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাসের কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল। কিন্তু কুরাইশদের ভয়ে অথবা অন্য কোন কারণে তারা ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত ছিল। মক্কা বিজয় তাদের সেই বাধা দূর করে দেয়। সেমতে তারা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে শুরু করে। সাধারণ আরবরাও এমনিভাবে দলে দলে ইসলামে দাখিল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে ঈমান আনার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা শুরু করে। মক্কা বিজয়ের আগে এ সমস্ত গোত্রগুলো ঈমান আনার ব্যাপারে দ্বিধা করত। তারা বলত, তার ও তার গোত্রের অবস্থা পর্যবেক্ষণ কর। যদি সে তার গোত্রের উপর জয়লাভ করতে পারে তবে সে নবী হিসেবে বিবেচিত হবে”
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
৩. তখন তুমি তোমার রবের হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পড়ো এবং তাঁর কাছে মাগফিরাত চাও৷ অবশ্যি তিনি বড়ই তাওবা কবুলকারী৷
অর্থাৎ, বুঝে নাও যে, রিসালতের তবলীগ ও হক প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যা তোমার উপর ছিল তা পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার দুনিয়া থেকে তোমার বিদায় নেওয়ার পালা এসে গেছে। এ জন্য তুমি আল্লাহর তসবীহ, প্রশংসা এবং ক্ষমা প্রার্থনায় অধিকাধিক মনোযোগী হও। এ থেকে আমরা জানতে পারি যে, জীবনের শেষ দিনগুলিতে উক্ত কর্মাবলী করতে অধিক যত্নবান হওয়া উচিত।
সূরা আল-ইখলাস
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ ۚ
১. বলুন, তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়
اَللّٰهُ الصَّمَدُ
২. আল্লাহ হচ্ছেন সামাদ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)
لَمۡ یَلِدۡ ۬ۙ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ
৩. তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি
وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّهٗ کُفُوًا اَحَدٌ
৪. এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।
কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়; না তাঁর সত্তায়, না তাঁর গুণাবলীতে এবং না তাঁর কর্মাবলীতে। ‘‘তাঁর মত কোন কিছুই নেই।’’ (সূরা শুরা ১১ নং আয়াত)
হাদীসে ক্বুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘মানুষ আমাকে গালি দেয়; অর্থাৎ, আমার সন্তান আছে বলে। অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে না জন্ম দিয়েছি; না কারো হতে জন্ম নিয়েছি। আর না কেউ আমার সমতুল্য আছে। (সহীহ বুখারী সূরা ইখলাসের তফসীর অধ্যায়।)
কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়; না তাঁর সত্তায়, না তাঁর গুণাবলীতে এবং না তাঁর কর্মাবলীতে। ‘‘তাঁর মত কোন কিছুই নেই।’’ (সূরা শুরা ১১ নং আয়াত)
হাদীসে ক্বুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘মানুষ আমাকে গালি দেয়; অর্থাৎ, আমার সন্তান আছে বলে। অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে না জন্ম দিয়েছি; না কারো হতে জন্ম নিয়েছি। আর না কেউ আমার সমতুল্য আছে। (সহীহ বুখারী সূরা ইখলাসের তফসীর অধ্যায়।)
এই সূরা ঐ সকল লোকদের বিশ্বাস খন্ডন করে, যারা একাধিক উপাস্যে বিশ্বাসী, যারা মনে করে আল্লাহর সন্তান আছে, যারা তাঁর সাথে অন্যকে শরীক স্থাপন করে এবং যারা আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না।
***********************************************
সুরা ইখলাসের শানে নজুল
- হজরত আনাস রাদিয়ল্লাহু আনহু বলেন, ‘খায়বারের কয়েকজন ইয়াহুদি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে বলল- হে আবুল কাসেম! আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নূর থেকে, আদমকে মাটি থেকে এবং পৃথিবীকে পানির ফেনা থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখন আপনার রব সম্পর্কে আমাদের জানান, তিনি কোন বস্তু থেকে সৃষ্ট?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন কোনো জবাব দেননি। অতপর (তাদের উত্তরে) হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম সুরা ইখলাস নিয়ে হাজির হন।
- হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন নাজরানের সাতজন খ্রিস্টান পাদ্রি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন-
‘আমাদের বলুন, আপনার রব কেমন? তিনি কিসের তৈরি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার রব কোনো জিনিসের তৈরি নয়। তিনি সব বস্তু থেকে আলাদা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা সুরা ইখলাস নাজিল করেন।
সুরা ইখলাসের বিষয়বস্তু
আল্লাহ তাআলা তার পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে সুরা ইখলাসের ৪ আয়াতের মাধ্যমে ৪টি বিষয় তুলে ধরেছেন। আর তাহলো-
- আল্লাহ এক। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার একত্ববাদের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন।
- তিনি অমুখাপেক্ষী। এ আয়াতে তিনি কোনো কিছুতেই মুখাপেক্ষী নন। কারো কাছে তার কোনো প্রয়োজন নেই। সব কিছুতেই তিনিই যথেষ্ট।
- তার জন্ম-সৃষ্টিতে কারো কোনো হাত নেই। তিনি কারো জনক নন আবার তাকে কেউ জন্ম দেননি। তিনি জন্ম-সৃষ্টি দেয়া ও হওয়া থেকে পূত-পবিত্র এবং মুক্ত।
- জন্মের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই এবং চতুর্থ আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি অতুলনীয়। চারটি আয়াতের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
- তার সমকক্ষ কেউ নেই। অর্থাৎ তিনি যে এক ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তার ওপর তাকিদ করা হয়েছে, সত্যয়ন করা হয়েছে যে, তার সমকক্ষ কেউ নেই।
সূরা আল-ফালাক
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ الۡفَلَقِ
১. বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি বেলার প্রতিপালকের কাছে
مِنۡ شَرِّ مَا خَلَقَ
২. তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে
وَ مِنۡ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ
৩. আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়
وَ مِنۡ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِی الۡعُقَدِ
এবং ঐ সব নারীর অনিষ্টতা হতে (যাদু করার উদ্দেশ্যে)যারা গিরায় ফুক দেয়
وَ مِنۡ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতে, যখন সে হিংসা করে।
জনৈক ইয়াহুদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরীল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইয়াহুদী জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গ্রন্থি ছিল। তিনি গ্রন্থিগুলো খুলে দেয়ার সাথে সাথে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন। জিবরীল ইয়াহুদীর নাম বলে দিয়েছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে চিনতেন। কিন্তু তিনি আজীবন এই ইয়াহুদীকে কিছু বলেননি, এমনকি তার উপস্থিতিতে মুখমণ্ডল কোনরূপ অভিযোগের চিহ্নও প্রকাশ করেননি। কপটবিশ্বাসী হওয়ার কারণে ইয়াহুদী রীতিমত দরবারে হাযির হত। [নাসায়ী: আল-কুবরা, ৩৫৪৩, মুসনাদে আহমাদ: ৪/৩৬৭]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর জনৈক ইয়াহুদী জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বললেন, আমার রোগটা কি, আল্লাহ তা’আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল; একজন শিয়রের কাছে এবং অন্যজন পায়ের কাছে বসল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তার অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি জাদুগ্ৰস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ কে জাদু করল? অন্যজন বলল, লাবীদ ইবন আসাম (বনু যুরাইকের এক ইহুদী মুনাফিক ব্যক্তি)। আবার প্রশ্ন হল: কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, তা কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে ‘যরওয়ান’ কূপে একটি পাথরের নীচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে কূপে গেলেন এবং বললেন, স্বপ্নে আমাকে সেই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর বস্তুটি সেখান থেকে বের করে আনলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আপনি ঘোষণা করলেন না কেন? (যে, অমুক ব্যক্তি আমার উপর জাদু করেছে)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা'আলা আমাকে রোগমুক্ত করেছেন। আর মানুষের মাঝে প্রতিক্রিয়া হোক, তা আমি চাইনি। [বুখারী: ৫৭৬৫]
তবে এটা মনে রাখা জরুরী যে, জাদুগ্ৰস্ত হওয়া নবুওয়তের পরিপন্থী নয়। যারা জাদুর স্বরূপ সম্পর্কে অবগত নয়, তারা বিস্মিত হয় যে, আল্লাহর রাসূলের উপর জাদু কিরূপে ক্রিয়াশীল হতে পারে। এখানে এতটুকু জানা জরুরী যে, জাদুর ক্রিয়াও অগ্নি, পানি ইত্যাদি স্বাভাবিক কারণাদির ক্রিয়ার ন্যায়। অগ্নি দহন করে অথবা উত্তপ্ত করে, পানি ঠাণ্ডা করে এবং কোন কোন কারণের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বর আনে। এগুলো সবই স্বাভাবিক ব্যাপার। রাসূলগণ এগুলোর ঊর্ধ্বে নন। জাদুর প্রতিক্রিয়াও এমনি ধরনের একটি ব্যাপার। কাজেই তাদের জাদুগ্ৰস্ত হওয়া অবাস্তব নয়। [আদওয়াউল বায়ান]
(২) মুমিন ব্যক্তি কোন জিনিসের ভীতি অনুভব করলে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে। মারইয়াম সম্পর্কে বলা হয়েছে, যখন অকস্মাৎ নির্জনে আল্লাহর ফেরেশতা একজন মানুষের বেশ ধরে তার কাছে এলেন (তিনি তাকে আল্লাহর ফেরেশতা বলে জানতেন না) তখন তিনি বললেন, “যদি তোমার আল্লাহর ভয় থাকে, তাহলে আমি দয়াময় আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।”। [সূরা মারইয়াম: ১৮] নূহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে আবেদন জানালেন, “হে আমার রব! যে জিনিস সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই তেমন কোন জিনিস আপনার কাছে চাওয়া থেকে আমি আপনার পানাহ চাই।” [সূরা হূদ: ৪৭] মূসা আলাইহিস সালাম যখন বনী ইসরাঈলদের গাভী যবেহ করার হুকুম দিলেন এবং তারা বলল, আপনি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছেন? তখন তিনি তাদের জবাবে বললেন, “আমি মুর্খ-অজ্ঞদের মতো কথা বলা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।” [সূরা আল-বাকারাহ: ৬৭] হাদীস গ্রন্থগুলোতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেসব “তাআউউয” উদ্ধৃত হয়েছে সবগুলো তাও অনুরূপ আল্লাহর কাছে চাওয়া হয়েছে। যেমন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো'আর সময় বলতেন, হে আল্লাহ! আমি যেসব কাজ করেছি এবং যেসব কাজ করিনি তার অনিষ্ট থেকে তোমার পানাহ চাচ্ছি। [মুসলিম: ২৭১৬]
অর্থাৎ কোন খারাপ কাজ করে থাকলে তার খারাপ ফল থেকে পানাহ চাই এবং কোন কাজ করা উচিত ছিল কিন্তু তা আমি করিনি, যদি এমন ব্যাপার ঘটে থাকে তাহলে তার অনিষ্ট থেকেও তোমার পানাহ চাই। অথবা যে কাজ করা উচিত নয় কিন্তু তা আমি কখনো করে ফেলবো, এমন সম্ভবনা থাকলে তা থেকেও তোমার আশ্রয় চাই। অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি দো'আ ছিল, “হে আল্লাহ! তোমার যে নিয়ামত আমি লাভ করেছি তা যাতে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে না নেয়া হয়, তোমার কাছ থেকে যে নিরাপত্তা আমি লাভ করেছি তা থেকে যাতে আমাকে বঞ্চিত না করা হয়, তোমার গযব যাতে অকস্মাৎ আমার ওপর আপতিত না হয় সে জন্য এবং তোমার সব ধরনের অসন্তুষ্টি থেকে আমি তোমার আশ্রয় চাচ্ছি”। [মুসলিম: ২৭৩৯]
অনুরূপভাবে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলতেন, “যে ইলম উপকারী নয়, যে হৃদয় তোমার ভয়ে ভীত নয়, যে নফস কখনো তৃপ্তি লাভ করে না এবং যে দো'আ কবুল করা হয় না, আমি সেসব থেকে তোমার আশ্রয় চাচ্ছি”। মুসলিম: ২৭২২- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে যেভাবে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন তা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, প্রতিটি বিপদ আপদ ও অনিষ্টকারিতার মোকাবিলায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়াটাই মুমিনের কাজ, অন্য কারো কাছে নয়। তাছাড়া আল্লাহর প্রতি বিমুখ ও অনির্ভর হয়ে নিজের ওপর ভরসা করাও তার কাজ নয়।
সূরা আন-নাস
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ النَّاسِ
১. বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের
مَلِکِ النَّاسِ ۙ
২. মানুষের অধিপতির,
اِلٰهِ النَّاسِ
৩. মানুষের ইলাহের কাছে
مِنۡ شَرِّ الۡوَسۡوَاسِ ۬ۙ الۡخَنَّاسِ
যে নিজেকে লুকিয়ে রেখে বার বার এসে কুমন্ত্রণা দেয় তার অনিষ্ট হতে,
এখানে কুমন্ত্রণাদাতা বলতে মানুষের সাথে নিয়োগকৃত শয়তানের কথা বলা হয়েছে, যে সঙ্গী তাকে খারাপ কাজ করাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখে না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই একজন শয়তান সঙ্গী নিয়োগ করা হয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সাথেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে আল্লাহ আমাকে তার উপর নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছেন। ফলে তার থেকে আমি নিরাপদ হয়েছি এবং সে আমাকে শুধুমাত্র ভাল কাজের কথাই বলে।=মুসলিম: ২৮১৪।
الَّذِیۡ یُوَسۡوِسُ فِیۡ صُدُوۡرِ النَّاسِ
৫. যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে,
مِنَ الۡجِنَّۃِ وَ النَّاسِ
(এই কুমন্ত্রণাদাতা হচ্ছে) জিন্নের মধ্য হতে এবং মানুষের মধ্য হতে।
মানুষ শয়তানঃ মানুষের মধ্যে কিছু শয়তান আছে যারা উপদেষ্টা, হিতাকাঙ্ক্ষী ও দয়াবানরূপে এসে অপরকে ভ্রষ্ট হতে উদ্বুদ্ধ করে।
কোন কোন উলামা বলেন, শয়তান যাদেরকে ভ্রষ্ট করে, তারা হল দুই শ্রেণীর। অর্থাৎ, শয়তান মানুষকে যেমন ভ্রষ্ট করে তেমনি জ্বিনকেও ভ্রষ্ট করে থাকে। তবে এখানে মানুষের অন্তরের উল্লেখ তার ভ্রষ্টতার তুলনামূলক আধিক্যের কারণে করা হয়েছে। নচেৎ জ্বিন সম্প্রদায়ও শয়তানের কুমন্ত্রণায় ভ্রষ্টতার শিকার হয়। কিছু সংখ্যক উলামা বলেন, কুরআনে জ্বিনদের জন্যও ‘রিজাল’ (পুরুষ মানুষ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (সূরা জিন ৬ নং আয়াত) সুতরাং তারাও মানুষ শব্দে শামিল।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.