প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এর দৃষ্টিতে এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী - এ কে এম বেলায়েত হোসেন।
একটি অজানা কথা
আলহাজ্ব এ বি এম মহি উদ্দীন চৌধুরী। ১৯৮৭ সালের ০২ জানুয়ারি সকাল ০৭ টা। কেন্দ্রীয় সন্মেলন উপলক্ষে প্রয়াত মন্নান ভাই সহ আমরা ১০/১২ জন ঢাকা রাজার বাগের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলাম। সকাল বেলা মহিউদ্দীন ভাই আমাকে ঢেকে ঘুম থেকে উঠালেন এবং বললেন দ্রুত বাইরে যাওয়র জন্য তৈরী হতে। তখনও বাকী সবাই ঘুমে। মহিউদ্দিন ভাই বৃহৎ আকারের কয়েকটি পরটা এবং সুজি হালুয়া এনে টেবিলে রেখে দিলেন যাতে ঘুম থেকে উঠে সবাই নাস্তা করতে পারেন।
আমাকে নিয়ে রাস্তায় গিয়ে মোহাম্মদ পুর যাওয়ার জন্য একটি টেক্সি ভাড়া করলেন। মোহাম্মদপুর কোথায় যাবেন কেন যাবেন এসব কিছুই আমাকে বলেননি এবং আমিও কিছু জানতে চাইনি।
মোহাম্মদ পুরে গিয়ে এক বহুতল ভবনের সমনে গিয়ে টেক্সী থামল। মহিউদ্দিন ভাই ভবনের দোতলায় উঠলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম। বাসার কলিং বেল চাপতেই কাজের লোক এসে দরজা খুলে দিল। মহিউদ্দিন ভাই লোকটাকে বললেন, "তুমি গিয়ে সাহেবকে বল, চট্টগ্রামের মহিউদ্দি চৌধুরী এসেছে।
লোকটা চলে গেল,মূহুর্তের মধ্যে সাধা চেক লুংগী এবং লম্বা পান্জাবি পরিহিত যে ব্যাক্তি অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে মহিউদ্দিন ভাইকে বুকে টেনে নিলেন তিনি আমাদের সকলের প্রিয় নেতা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের তদানিন্তন সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান। মহিউদ্দীন ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। কুশল বিনিময় চলছে এ সময় হঠাৎ নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে হাজির হলেন শ্রদ্ধাভাজন নেত্রী শহীদ আই,ভি,রহময়ন। মহিউদ্দি ভাই সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, "আপা এটা আপনি কি করলেন,আপনি নিজ হাতে আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসলেন "। উত্তরে তিনি (আই,ভি,রহমান) বললেন, আপনি যে মহিউদ্দীন ভাই, আমাদের শুধু নয় দেশের মানুষের প্রিয় নেতা।
আপনার জন্য কি কাজের লোক নাস্তা নিয়ে আসবে? গোস্ত-পরটা-ডিম দিয়ে চারজন একসাথে বসে নাস্তা করলাম। চা পান করতে করতে তারা তিনজন অনির্ধারিত রাজনৈতিক আলোচনা করছিলেন। আমি ছিলাম একমাত্র নিরব শ্রোতা। আলোচনার এক পর্যায়ে বেগম আই,ভি,রহমান বললেন,"আমাদের প্রতি জেলায় যদি মহিউদ্দীন ভাই এর মত একজন করে ত্যাগী এবং সাহসী নেতা থাকত তাহলে অনেক আগেই সামরিক সৈর শাষনের অবষান হতো এবং আমাদের দল ক্ষমতায় আসত"।
জবাবে শ্রদ্ধেয় জিললুর রহমান সাহেব বললেন, "প্রতি জেলায় নয়, প্রতিটি বিভাগে একজন করে মহিউদ্দীনের মত নেতা থাকলে অনেক আগেই আমরা ক্ষমতায় আসতে পারতাম। মহিউদ্দিন মত ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করার মত নেতা বিরল "। আমি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে এতক্ষন তাঁদের কথা শুনছিলাম।সেদিনই মনে মনে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়েছিলাম যতদিন বেঁচে থাকি মহিউদ্দীন চৌধুরীর সাথে থেকে রাজনীতি করব। প্রয়াত জিললুর রহমান সাহেবের সে অমর বাণী আজ ও ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয় জননেত্রী শেখ হাসিনর বক্তব্যে এবং সকল কেন্দ্রীয় নেতাদের কথায়।
মহিউদ্দিন চৌধুরী আওয়ামীলীগের সম্পদ।দেশের প্রগতিশীল রাজনীতির সম্পদ। মহিউদ্দিন চৌধুরী দেশের ভবিষ্যত যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে আন্দোলনকারীদেরআদর্শ হয়ে থাকবে অনাগত কাল। বিদায়ের প্রাক্কালে মহিউদ্দিন ভাই জিল্লুর রহমান সাহেবকে বললেন, বেলায়ত ভাই আমাদের অত্যন্ত নিবেদিত প্রান নেতা। তিনি সাধারন বীমাতে চাকরি করেন কিন্তু আওয়ামীলীগ করার কারনে বার বছর যাবৎ তার পদুন্নতি হচ্ছেনা। আপনি যদি সাধারণ বীমার এম,ডি,কে বলেন তহলে প্রমোশনটা হতে পারে। (এম,ডি, ছিলেন জিললুররহমান সাহেবের ভায়রা ভাই) আমার কিন্তু মনেও পর ছিলনা যে আমি কখন মহিউদ্দিন ভাইকে কথাটা বলেছিলাম।পরে জেনেছি জিললুর রহমান সাহেব নিজে সাধারণ বীমার অফিসে গিয়েছিলেন। উনাকে বলা হল বেলায়েতের বিরুদ্ধ এন এস আই এর রিপোর্ট আছে যে কারনে তার পদুন্নতি দেয়া যাচ্ছেনা।মুজিব আদর্শের অকুতভয় সৈনিক বীর মহি উদ্দিন তোমাকে জানাই লাখ ছালাম।
লেখক : এ কে এম বেলায়েত হোসেন - উপদেষ্টা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.