অল্প বয়সেই রাজপথে নেমে পড়েছিলেন হাসান মনসুর।
৬ মাস ২২ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন হাসান মনসুর।
অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিনে প্রিয় ভাই হাসান মনসুর তার টাইমলাইনে যে ছবিটি পোষ্ট করেছেন সে ছবিটি পোষ্ট হওয়ার পর থেকেই শুধু দেখছিলাম আর ভাবছিলাম। কত অল্প বয়সে হাসান মনসুর রাজপথে নেমে পড়েছেন।
নিজ দলের দুঃসময়ে,গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের হারানো অধিকার পুনঃ প্রতিষ্টা করার আন্দোলনে।যে গনতন্ত্রকে হত্যা করে মানবাধিকার হরণ করা হয়েছিল ১৯৭৫ পনের আগষ্ট ভোর রাতে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করার মাধ্যমে।
সে গনতন্ত্র হত্যাকারী মানবাধিকার লুণ্ঠনকারী স্বৈরাচারের হাতে হাসান মনসুর ও একই পরিনতি ভোগ করতে হল অর্থাৎ কারা নির্যাতন ও কারা ভোগ যা ২০০ শত দিনের ও অধিক কাল। মনসুর ভাইদের ত্যাগ তিতিক্ষা কারা নির্যাতনের পর গনতন্ত্র ফিরে এলো মানবাধিকার পুনঃ প্রতিষ্টিতি হল,স্বাধিনতা অর্জনে নেতৃত্ব দানকারী দল ক্ষমতায় এল। কিন্তু যে মনসুর ভাইদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমার বাঙলা মা স্বাধিনতার পক্ষের শক্তির হাতে নিরাপদ, সে বাঙলায় হাসান মনসুরেরা কেমন আছেন?
হাঁ হাসান মনসুররা ত্যাগ তিতিক্ষা ও দলের দুঃসময়ে জেল জুলুম সহ্য করে,পেয়েছেন অবজ্ঞা,অবহেলা।
★ দলের পদ পদবী দিয়ে ছিনিয়ে নেয়া। ************************************************ (রঙিন সময়ে সাদা কালো দিনের একটি ছবি,৬ মাস ২২ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর ,তখন আমি ওমর গনি এম,ই,এস কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ।
১৯৯৪ সালে অক্টোবরে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের ৪৮ ঘণ্টা হরতাল চলাকালে - বি এন পি সরকারের মামলায় ২৮ নভেম্বর ১৯৯৪ সালে নন্দনকানন এলাকা থেকে গ্রেফতার হই- সাথে ছিল প্রিয় ভাই, চট্টগ্রামের জনপ্রিয় , সাহসী ছাত্রনেতা - একই কলেজের জি এস Helal Akbar Chowdhury Babor , ছাত্রনেতা হুমায়ন কবির রানা ।
আমরা একসাথে গ্রেফতার হলেও তারা ২ জন আমার ১৪ দিন আগে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে। তখন কোরবানির ঈদের ডামাডোল - খুব ইচ্ছা ছিল ঈদের আগেই বের হবো - কোরবানির হাটে যাবো । ভাগ্য এতো খারাপ ছিল - আমার মুক্তির নির্দেশ ও আটকাদেশের বিষয়ে আপীলের রায় যেদিন রিভিউ বেঞ্চ প্রদান করেছিল সেদিন ছিল ঈদের আগে শেষকর্ম দিবস।
তারাহুরা করলে দেরী হয়ে যায় , বেশী আশা করলে পুরন হয়না - এটার প্রমান পাইসিলাম। ঢাকা হাইকোর্ট থেকে আমার জামিনের আদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছল কোরবানির ঈদের ৪ দিন পর - তখন ছিল এনালগ যুগ।মুক্তির দিন কনডেম সেলে - সন্ধ্যায় লক আপের ৫ মিনিট আগেই এক মিয়াসাহেব (জেল পুলিশ) আমার নাম ধরে ডেকে বলেন - চলেন আপনার খেলা ফাইনাল।
এতো নিষ্ঠুর অপেক্ষা তাই - আমার ব্যবহারের কিছু না নিয়েই শুধু স্যান্ডেল পরে দৌড় দিয়েছিলাম - জেলার মহোদয়ের অফিসে । দূর থেকে হাত নেড়ে বিদায় নিয়েছিলাম সেলে থাকা আমার অপর দুজন সঙ্গীর সাথে -- আমার এই হুরস্থুলের কথা বলে পরবর্তীতে তারা আমাকে খেপাত।
সেবারের ঈদ মিস হবার যন্ত্রণা আর সবার সাথে ঈদ করার আকুলতা -- এসব কথা মনে হলে এখনো হাসি। তবে রমজানের ঈদ টেনশন ছাড়াই আনন্দ মুখর পরিবেশে সেখানে কাটিয়েছিলাম ।
ছবিতে আছেন - কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মরহুম ফরিদ উদ্দিন সাজ্জাদ , ছাত্রনেতা জসীম উদ্দিন খন্দকার ভাই , চন্দন বিশ্বাস , কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি Mithun Barua সাধারণ সম্পাদক Hazi Mohammed Salim প্রচার সম্পাদক রিফাত পাশা জঙ্গি । সামনে বসে আছেন আজকের জনপ্রিয় আওয়ামীলীগ নেতা - এম আর আজিম। সেদিন ওমরগনি এম ই এস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগ ও ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে কলেজ ছাত্র সংসদ অফিসে সহযোদ্ধাদের তাৎক্ষনিক ভালোবাসা পাওয়ার ছবি ।
একটা কথা - নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্মীরা অনেকেই জানেনা - রাজনীতির উলটো পিঠে আরেকটি অধ্যায় আছে - কারাগার। আজকের সুখকর আন্দন্দমুখর সেলফি আর ডিজিটাল নির্ভর রাজনীতির বিপরীতে আমাদের মনে রাখতে হবে দলের দুঃসময়ে প্রয়োজনে সেখানেও যেতে হতে পারে।
একজন আদর্শিক রাজনৈতিক কর্মীর জন্য - অনেকসময় কারাগার নিত্য সংসারে পরিনত হয়। সরকারে আমরা সবসময় থাকব, এরকম কোন কথা নাই - তাই ত্যাগের মানসিকতা নিয়েই রাজনীতি করতে হবে।
আরেকটা কথা না বললেই নয় --- দলের দুঃসময়ে যারা জেল খাটে , মাইর খায় -- তাদের পদ ছিনিয়ে নেওয়া হয় - দেওয়া হয় তাদের যারা তখন দেশেই ছিলনা আর পদটা তারাই কেড়ে নেয় - যারা দল বিরোধী দলে থাকতে-- জেল/মামলা দুরের কথা - বাণিজ্য আর মাল কামাতেই বিজি ছিল । রাজনীতি থেকে সবাই পায়না - তারাই পায় যারা থাকেন সেফ সাইডে)
০২.০৩.২০১৮
হাসান মনসুর:সাঃ সম্পাদক (সাবেক)কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগ-চট্টগ্রাম মহানগর।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.