Header Ads



চট্টলর্শাদুল জননেতা এম এ আজিজ এর জীবন কথা।

 

চট্টলর্শাদুল জননেতা এম এ আজিজ এর জীবন কথা।

এম এ আজিজ ১৯৬৪ সালে তিনি সামপ্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।

জন্ম

১৯২১ সালে চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহরে। তাঁর পিতার নাম আরহাজ্ব মহব্বত আলী সরকার এবং মাতা রহিমা খাতুন। শৈশবে জনৈক ইসহাক মাস্টারের কাছে এম. এ. আজিজের পড়ালেখার হাতেখড়ি। ১৯৩০ সাল থেকে আগ্রাবাদ ছোবহানিয়া প্রাইমারী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করে ১৯৩৩ সালে ভর্তি হন দক্ষিণ কাট্টলি এম. ই. স্কুলে। পরে তিনি ১৯৪০ সালে পাহাড়তলী রেলওয়ে হাই স্কুল থেকে প্রথম শ্রেণীতে ম্যাট্রিক পাস করেন। এ সময় তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং পাকিস্তান আন্দোলনে সামিল হন। ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আই. এ. পাস করেন।

১৯৪৯ সালে এম. এ. আজিজ চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে পূর্ব বাংলার স্বার্থবিরোধী ‘মূলনীতি কমিটির রিপোর্ট’ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং সরকারি মদতে যে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৫২ সালে তিনি চট্টগ্রামে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এই জন্য ‘২১ ফেব্রয়ারি’ পরবর্তী সময়ে তিনি বহুবার গ্রেফতার হন।

১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত সভায় দল পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে এম. এ. আজিজের ভূমিকা ছিল সবচাইতে বেশি। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভায় পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাব পাশ করিয়ে ঐ প্রস্তাবের কপি বিভিন্ন জেলা কমিটির কাছে পাঠান এবং তাঁদের মতামত চেয়ে ফিরতি খামও পাঠান। বিভিন্ন জেলা পুনরুজ্জীবনের পক্ষে মত দিলে তাদের মতামত নিয়ে এম. এ. আজিজ প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ এবং শেখ মুজিবের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেন।

১৯৬৪ সালে তিনি সামপ্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ‘৬ দফা’ ঘোষণা করলে তাঁকে সমর্থন করে প্রথম বিবৃতি দেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. এ. আজিজ ও তাঁর কয়েকজন সহকারী ৬ দফার পূর্ণাঙ্গ পুস্তিকাও প্রকাশ করেন প্রথম তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৬ ফেব্রয়ারি লালদীঘি ময়দানে ৬ দফার পক্ষে প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভার মুখ্য সংগঠক ছিলেন তিনি। ঐ বছর ৮ মে তিনি বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন আহমদ, জহুর আহমদ চৌধুরী প্রমুখের সাথে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন।

১৯৬৭ সালে সর্বপ্রথম তিনি প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার দাবি করে বিবৃতি দেন। বঙ্গবন্ধুকে ১৯৬৮-৬৯ সালে প্যারলে মুক্তি না নেয়ার জন্য এম. এ. আজিজ বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে পরামর্শ দেন। ১৯৬৮ সালে আগরতলা মামলায় শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হলে তাঁর পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্যে এম. এ. আজিজ ‘মুজিব ফান্ড’ গঠন করেন। এম. এ. আজিজ দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাবান নেতা ছিলেন। এ কারণে চট্টগ্রামে বাইরে দেশ জুড়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। তাই এ মহান নেতার অবদান চট্টগ্রামবাসীর কাছে এক অবিস্মরণীয় গৌরবগাথা। চট্টগ্রাম এম. এ. আজিজ স্টেডিয়াম তাঁর নামেই নামকরণ করা হয়। এম. এ. আজিজ ১৯৭১ সালে ১০ জানুয়ারি বহদ্দারহাট ফটিকছড়িতে জীবনের শেষ জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন। ১১ জানুয়ারি রাত একটায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এই বহুদর্শী প্রজ্ঞাবান জননেতা পরলোক গমন করেন। সূত্র : ইন্টারনেট

তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক, সত্তরে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্য বা এমএনএ ছিলেন; এমনি আরো নানা পরিচয়ে তাঁকে উপস্থাপন করা যেতে পারে, কিন্তু তিনি যে ‘এক দফা’র নামে স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন, সেটাই তাঁর সব পরিচয় ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠা উচিত। আওয়ামী লীগ বা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ তাঁর কাছে যত ঋণী, আমাদের স্বাধীনতা এমনকি বাংলাদেশও তাঁর কাছে অনেকখানি ঋণী। তিনিই প্রথম স্বাধীনতার কথা বলতে শুরু করেছিলেন।

একাত্তরের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক জনসভায় বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি করে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। কবির ভাষায় সেই থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের হয়ে যায়। তার আগেও ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলীয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন এবং ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীনতা ইশতেহার পাঠ করা হয়। কিন্তু তারও বহু আগে, ৬৯ সালে চট্টগ্রামে স্বাধীনতার কথা উচ্চারিত হয় জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজের কণ্ঠে। তিনি সে বছর সীতাকুণ্ডের এক জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন, ‘ছয় দফা আদায় না হলে এক দফা’। তখন দেশে সামরিক শাসন চলছিলো। এবং উক্ত ঘোষণার জন্য সামরিক শাসন কর্তৃপক্ষ এম এ আজিজকে আটক করেছিলেন।

অবশ্য তিনি সরাসরি স্বাধীনতার কথা বলেন নি এবং ‘স্বাধীনতা’ শব্দও উচ্চারণ করেন নি। কিন্তু এক দফা’র মাধ্যমে তিনি যে স্বাধীনতার কথাই বুঝিয়েছেন, সেটা বুঝে নিতে কারো অসুবিধা হয় নি। ৬৯ সালে মিরসরাই থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় এম এ আজিজ অনুরূপ ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, “সরকার ৬ দফা মেনে না নিলে জনগণ ১ দফার তথা স্বাধীনতার সংগ্রাম আরম্ভ করবে।’’ এবার আর রাখডাক নয়, স্বাধীনতার কথা সরাসরিই বলে ফেললেন তিনি। এই ঘোষণার জন্যও তাঁকে গ্রেপ্তার করে আটকাদেশ দেয়া হয়েছিলো। ১৯৭০ সালে কাট্টলীর এক জনসভায় তিনি আবার ঘোষণা করেন ‘যদি ৬ দফা প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে আমরা এক দফার আন্দোলন করবই।’

এভাবে তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের কথা প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে বলতে শুরু করেছিলেন। সত্তরের প্রথমভাগে কক্সবাজার পাবলিক হলে এক কর্মী সম্মেলনে তিনি কর্মীদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ‘সরকার যদি ৬ দফা না মানে তাহলে কি করবেন? জবাবের জন্য সামান্য একটু প্রতীক্ষা, তারপর দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে সুস্থির ঘোষণা হয় ‘ছয় দফা না মানলে এক দফার আন্দোলন শুরু হবে।’
এক দফার প্রবক্তা হিসেবে তিনি ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের কাছে অতি প্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ডাকসু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হল বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতেও তিনি ছাত্রদের দ্বারা সংবর্ধিত হয়েছিলেন। এটা তো সত্যি যে, ছাত্ররাই স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সেই ছাত্ররাই যখন আওয়ামী লীগের অনেক এমএনএ ও এমপিএর মধ্যে মাত্র একজন এমএনএ এবং দেশের অনেক জেলার মধ্যে মাত্র একটি জেলার সাধারণ সম্পাদককে আন্দোলনের পীঠস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করে জাতীয় নেতার আসনে অধিষ্ঠিত করে, তখন এটিই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে যে, এমএ আজিজের এক দফার মধ্যে সংগ্রামী ছাত্র সমাজ তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হতে দেখেছিলো।

সত্তরের নির্বাচনের পর লালদীঘির ময়দানে সংবর্ধনা সভায় ১৯৭১ সালের পহেলা জানুয়ারি এম এ আজিজ বললেন, ‘‘আমি বাতাসে বারুদের গন্ধ পাচ্ছি। সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না। আর ছয় দফা নয়। এখন এক দফার আন্দোলন শুরু হবে।’’ তিনি আরো বললেন, ‘‘জনগণ ভোটের মাধ্যমে পাকিস্তানকে দু’ভাগ করে দিয়েছে”।
১৯৭০ সালের জুলাই মাসে কৃষকদের খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে সরকার ক্রোক জারি করলে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। সরকারও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের গ্রেফতার করতে থাকে এবং অসংখ্য কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। মিরসরাইয়ে ফজলুল হক বিএসসিসহ ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে, সাতকানিয়াতে তৈয়বুর বশীরসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে, রাঙ্গুনিয়া কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৮ জন, পটিয়া থানা ছাত্রলীগ কর্মী শামসুদ্দীনসহ ৫/৬ জন এভাবে মোট ৪৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর প্রতিবাদে ১ জুলাই মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জনসভা হয়। প্রধান অতিথির ভাষণে এম এ আজিজ সরকারি আচরণের তীব্র নিন্দা করেন।

৬ দফার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘৬ দফা আদায় না হলে জনগণ এক দফার আন্দোলন বেছে নিতে বাধ্য হবে।’’ এই বক্তব্যের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭০ সালের ১৫ মে লালদিঘির ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায় সৈয়দ নজরুল ইসলামের উপস্থিতিতে তিনি এক দফার কথা ঘোষণা করেন। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘‘৬ দফা গ্রহণ করা না হলে দেশ বিভক্ত হয়ে যাবে। তখন মাত্র এক দফার আন্দোলনই শুরু করা হবে।”

রাজনীতিতে তিনি তাঁর নেতৃত্বের গুণেই মহিমান্বিত ছিলেন। রাজনীতির জন্য তিনি স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হয়েও বেশি এগোতে পারেন নি। কলেজ জীবনে তিনি রাজনীতির কারণে বহিষ্কার হয়েছিলেন। একই সাথে ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতিতে তিনি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। বিভাগপূর্ব সময়ে এম.এ. আজিজ পাকিস্তান আন্দোলনে তরুণ নেতা ও সংগঠক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। পরে মুসলিম লীগের প্রগতিশীল গ্রুপ আবুল হাশিম-সোহরাওয়ার্দী গ্রুপে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর অসামপ্রদায়িক চেতনা ছিল প্রখর। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার বিরোধী রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা লগ্নে ঐ দলে যোগদান ১৯৫৪ সালে ২১ দফা আন্দোলনের যৌক্তিকতা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন। এজন্য গ্রেফতার হন।
১৯৫৬ সালে তিনি যুক্ত নির্বাচনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। ঐ বছর তিনি ডবলমুরিং-সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগসহ ৫টি দলের সমন্বয়ে এনডিএফ গঠিত হয়। পরবর্তী দু’বছর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এনডিএফ-এর ব্যানারেই রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যান। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত সভায় দল পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে এম.এ. আজিজের ভূমিকা ছিল সবচাইতে বেশি।

তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভায় পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাব পাশ করিয়ে ঐ প্রস্তাবের কপি বিভিন্ন জেলা কমিটির কাছে পাঠান এবং তাঁদের মতামত চেয়ে ফিরতি খামও পাঠান। বিভিন্ন জেলা পুনরুজ্জীবনের পক্ষে মত দিলে তাদের মতামত নিয়ে এম.এ. আজিজ প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ এবং শেখ মুজিবের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি সামপ্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি সম্মিলিত বিরোধী দলের আহবায়ক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ৬ দফা ঘোষণা করলে তাঁকে সমর্থন করে প্রথম বিবৃতি দেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ. আজিজ ও তাঁর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী। ৬ দফার পূর্ণাঙ্গ পুস্তিকাও প্রকাশ করেন প্রথম তিনি।

১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লালদীঘি ময়দানে ৬ দফার পক্ষে প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভা আয়োজন থেকে সফলভাবে সম্পন্ন করা পর্যন্ত সমস্ত কর্মকাণ্ডের পেছনে এম এ আজিজ মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। জনসভায় তিনি উদ্দীপনাময়ী ভাষণ দেন। একই বছরে ১৮-১৯ মার্চ মতিঝিলের ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন এম.এ. আজিজ। কাউন্সিলে ৬ দফাকে পাশ করানোর জন্য তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। ঐ বছর ৮ মে তিনি বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন আহমদ, জহুর আহমদ চৌধুরী প্রমুখের সাথে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। কারাগারে থেকেও তিনি চট্টগ্রামের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।

১৯৬৭ সালে সর্বপ্রথম তিনি প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকার দাবি করে বিবৃতি দেন। ১৯৬৮-৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে প্যারলে মুক্তি না নেয়ার জন্য এম.এ. আজিজ বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে পরামর্শ দেন। ১৯৬৮ সালে আগরতলা মামলায় শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হলে তাঁর পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্যে এম.এ. আজিজ ‘মুজিব ফান্ড’ গঠন করেন।
১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বানে মুজিব দিবস ও হরতাল পালিত হয়। এদিন লালদীঘি ময়দানে লাখো লোকের জনসভায় সভাপতির ভাষণে এম.এ. আজিজ লালদীঘি ময়দানের নাম পরিবর্তন করে ‘মুজিব পার্ক’ ঘোষণা করেন। ’৬০-এর দশকের শেষ দিকে এম.এ. আজিজের চিন্তাধারায় সমাজতন্ত্রের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

১৯৬৮ সালে ২৬ আগস্ট বাকলিয়া ওয়াজিরপাড়ার এক জনসভায় এম.এ. আজিজ বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রয়োজন। চট্টগ্রামে গণঅভ্যুত্থানের নায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালের ১৮ জুলাই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিলে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭০ সালে তাঁর গ্রেফতারের বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশে বিরাট আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং ২৭ জুলাই আজিজ দিবস পালন করা হয়। ১৫ আগস্ট তিনি মুক্তি পান।
১৯৭০ সালে এম.এ. আজিজ আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ বছর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তিনি এম.এন.এ. (জাতীয় পরিষদের সদস্য) নির্বাচিত হন।

এম.এ. আজিজ দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাবান নেতা ছিলেন। এ কারণে চট্টগ্রামের বাইরে দেশ জুড়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। তাই এ মহান নেতার অবদান চট্টগ্রামবাসীর কাছে এক অবিস্মরণীয় গৌরবগাথা। চট্টগ্রাম এম.এ.আজিজ স্টেডিয়াম তাঁর নামেই নামকরণ করা হয়।

এম.এ. আজিজ ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি বহদ্দারহাট ফটিকছড়িতে জীবনের শেষ জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন। ১১ জানুয়ারি রাত একটায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এই মহান নেতা পরলোকগমন করেন।

 

কোন মন্তব্য নেই

please do not enter any spam link in the comment box.

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.