সাহাবা ও তাবেয়ী যুগে মহামারি
ইসলামের ইতিহাসে মহামারির তালিকা অনেক দীর্ঘ। এখানে শুধু সূচনালগ্নের বড় কয়েকটির কথা উল্লেখ করা হলো। বিস্তারিত জানতে ইবন হাজারের ‘বাজলুল মাঊন ফি ফাযলিত্ত্বাঊন’ গ্রন্থটি দেখতে পারেন।
ইসলামের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সংগঠিত এসব মহামারিতে যেমন মুসলমানদের জান ও মালের ক্ষতি হয়েছে, তেমনি ব্যাপক উন্নতি হয়েছে আত্মশুদ্ধি ও ঈমানের দৃঢ়তার। কাজেই আসুন, আমরাও এই মহামারিতে ভীত না হয়ে নবী নির্দেশনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলি, সেই সঙ্গে মহান রবের কাছে সব কৃতকর্মের জন্য তওবা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
আবদুল্লাাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে উমার (রা.) শামের দিকে রওনা হলেন। ‘সারগ’ পর্যন্ত পৌঁছলে ‘আজনাদ’ অধিবাসীদের (প্রতিনিধি ও অধিনায়ক) আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ (রা.) ও তাঁর সহকর্মীরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তখন তাঁরা খবর দিলেন যে শামে মহামারি শুরু হয়ে গেছে। উমার (রা.) লোকদের মাঝে ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ফজর পর্যন্ত সওয়ারির ওপর থাকব, তোমরাও (ফজর পর্যন্ত সওয়ারির ওপর) অবস্থান করো।’ তখন আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ (রা.) বললেন, আল্লাহর তাকদির থেকে পলায়ন করে? তখন উমার (রা.) বললেন, ‘হে আবু উবায়দা! হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর তাকদির থেকে আল্লাহরই তাকদিরের দিকে পলায়ন করছি। তোমার যদি একপাল উট থাকে আর তুমি একটি উপত্যকায় অবতীর্ণ হওয়ার পর দেখো যে দুটি প্রান্তর রয়েছে, যার একটি সবুজ শ্যামল, অপরটি শূন্য। সে ক্ষেত্রে তুমি যদি সবুজ শ্যামল প্রান্তরে (উট) চরাও, তাহলে আল্লাহর তাকদিরেই সেখানে চরাবে, আর যদি তৃৃণশূন্য প্রান্তরে চরাও, তাহলেও আল্লাহর তাকদিরেই সেখানে চরাবে।’ বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় আবদুর রাহমান ইবন আউফ (রা.) এলেন, তিনি (এতক্ষণ) তাঁর কোনো প্রয়োজনে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে (হাদিসের) ইলম রয়েছে। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা কোনো এলাকায় এর সংবাদ শুনতে পাও তখন তার ওপরে (দুঃসাহস দেখিয়ে) এগিয়ে যেয়ো না। আর যখন কোনো দেশে তোমাদের সেখানে থাকা অবস্থায় দেখা দেয় তখন তা থেকে পলায়ন করে বেরিয়ে পোড়ো না।’ বর্ণনাকারী বলেন, তখন উমার (রা.) আল্লাহর হামদ করলেন। তারপর চলে গেলেন। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৯১)
তাবেয়ী যুগে মহামারি
ত্বাঊনে জারিফ, যাতে ব্যাপকসংখ্যক কোরআনের হাফেজ ও মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেছিলেন। এর সঠিক সময় নিয়ে ইতিহাসবিদদের মতভিন্নতা দেখা যায়। ৬৯, ৭০ ও ৭২ হিজরির ভিন্ন ভিন্ন তিনটি মত পাওয়া যায়। তবে ইবন হাজার (রহ.) ৬৯কে সমর্থন করেছেন। ত্বাঊনে ফাতায়াত, যা ৮৭ হিজরিতে আঘাত হেনেছিল। এতে সর্বাধিকসংখ্যক মহিলা ও যুবক শাহাদাতের সুধা পান করেন; যার কারণে ফাতায়াত বলে এটির নামকরণ হয়েছিল। ত্বাঊনে আদি ইবন আরত্বাত, যা ১০০ হিজরিতে শামে আঘাত হেনেছিল। অতঃপর ১২৭ হিজরিতে তাঊনে গোরাব। ১৩১ হিজরিতে বসরায় আঘাত হানে ত্বাঊনে সলম ইবন কুতাইবাহ, যা রজব মাসে শুরু হয়ে রমজানে তীব্র রূপ ধারণ করে এবং শাওয়ালে শেষ হয়। এতে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার মানুষ ইন্তেকাল করেছে। ২২১ হিজরিতে বসরায় আরো একটি মহামারি আঘাত হানে, যাতে এত বেশি পরিমাণে লোক মারা যায় যে বলা হয়ে থাকে, কারো যদি সাতটি সন্তান থাকত, তাহলে গড়ে পাঁচজনই ইন্তেকাল করেছে। (বাজলুল মাঊন ফি ফাযলিত্ত্বাঊন, পৃষ্ঠা ৩৬১-৩৬৪)
প্রিয় পাঠক! ইসলামের ইতিহাসে মহামারির তালিকা অনেক দীর্ঘ। এখানে শুধু সূচনালগ্নের বড় কয়েকটির কথা উল্লেখ করা হলো। বিস্তারিত জানতে ইবন হাজারের ‘বাজলুল মাঊন ফি ফাযলিত্ত্বাঊন’ গ্রন্থটি দেখতে পারেন।
ইসলামের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সংগঠিত এসব মহামারিতে যেমন মুসলমানদের জান ও মালের ক্ষতি হয়েছে, তেমনি ব্যাপক উন্নতি হয়েছে আত্মশুদ্ধি ও ঈমানের দৃঢ়তার। কাজেই আসুন, আমরাও এই মহামারিতে ভীত না হয়ে নবী নির্দেশনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলি, সেই সঙ্গে মহান রবের কাছে সব কৃতকর্মের জন্য তওবা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.