চট্টগ্রামের মর্যাদা রক্ষা এবং অধিকার আদায়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী অনন্য একটি নাম।
চট্টগ্রামের মর্যাদা রক্ষা এবং অধিকার আদায়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী অনন্য একটি নাম।
তোমার আসন শূন্য আজি’ কথাটা এক অর্থে ঠিক, আবার পুরোপুরি ঠিক না। কারণ, শূন্য আসন কাউকে না কাউকে দিয়ে পূর্ণ হয়। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক শূন্য হওয়া পদটিও নিশ্চয় পূর্ণ হবে কোন না কোন নেতাকে দিয়ে। কিন্তু এটা সকলেই মানছেন যে, আরেকজন আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী আর আসবেন না। কেউ নিজের বুকে মুষ্টিবদ্ধ হাত রেখে বলবেন না যে, ‘আমি মহিউদ্দিন চৌধুরী এটা মানি না।’
আজীবন সংগ্রামী রাজনীতিবিদ চট্টলবীর আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তাঁর এতটুকু আসার পথটা মোটেও শর্টকাট কিংবা মসৃণ ছিল না। প্রতিনিয়ত লড়াই, সংগ্রাম আর নির্যাতন সয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর এমএ আজিজ এবং জহুর আহমদ চৌধুরীর পর চট্টগ্রামে যিনি আওয়ামী লীগ হিসেবে ব্র্যান্ডেড হয়েছিলেন তিনি আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও তাঁর সমকক্ষ কেউ নন। দলের রাজনীতি যেমন একনিষ্ঠভাবে করেছেন, তেমনিভাবে কোন সিদ্ধান্ত মনঃপুত না হলে দলের বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়েছেন। সে কারণে তিনি সকলের নেতা হতে পেরেছিলেন।
আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের গণমানুষের নেতা। থাকবেনও কিংবদন্তি হয়ে।সুললিত ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত তিনি ছিলেন না। কিন্তু সে রূঢ়ভাষা এবং শাসন ছিল কর্মী সমর্থকদের কাছে বড়ই মধুর। এমন নেতা খুব কমই পাওয়া যাবে যার গালাগাল শুনেও নেতা-কর্মীরা তাঁর আশপাশে ঘুরঘুর করেন। চট্টগ্রামে তেমন নেতা এর আগে আরেকজন ছিলেন, যাঁর নাম জহুর আহমদ চৌধুরী। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মধ্যে চট্টলবাসী খুঁজে পেয়েছিল সেই পূর্বসূরি জহুর আহমদ চৌধুরীকে। রাজনীতির গতি পথটাও ছিল তেমনই। শ্রমিক নেতা থেকে জননেতা।
রাজনীতিতে নিজ দলের সিদ্ধান্তে নিজের বিবেচনাও যে থাকতে পারে তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নিজ দেশের কর্তৃত্ব রক্ষায় তিনি মার্কিন কোম্পানি এসএসএ পোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়েছিলেন। কোন দলীয় মেয়র তাঁরই সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন তা কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু নেমেছিলেন একজনই। বলেছিলেন, ‘আমি মহিউদ্দিন চৌধুরী মানি না, এটা হতে দেব না। প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিহত করব।’ সে আন্দোলনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন।
দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে তিনি সব সময় ছিলেন সদাসতর্ক। অনিয়মের অভিযোগ পেলেই গর্জে উঠেছেন। ক্ষমতায় কিংবা সরকারে যারাই থাকুন না কেন মহিউদ্দিন চৌধুরীকে অবজ্ঞা করা ছিল খুবই কঠিন।
আলোচিত যিনি, সমালোচনাও তাঁর থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শেষ বিচারে তিনি একজন মানুষ। তাঁর সব পদক্ষেপ শতভাগ সঠিক হবে এমন দাবি কেউ নিশ্চয়ই করবেন না। তবে দেশপ্রেম, চট্টগ্রামের মর্যাদা রক্ষা এবং অধিকার আদায়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী অনন্য একটি নাম। এর আগে এভাবে কেউ বলেননি যে, ‘আমার চট্টগ্রাম।’
আজীবন চট্টগ্রামে রাজনীতি করেও তিনি পেয়েছিলেন জাতীয় নেতার মর্যাদা। তাঁর বক্তব্য সব সময়ই ছিল গুরুত্ববহ। যা বলেছেন তা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে গুরুত্বের সঙ্গে। আঞ্চলিক পর্যায়ে রাজনীতি করা দেশের আর কোন নেতা কেন্দ্রকে এতটা প্রভাবিত করতে পারেননি।
সংগ্রাম করেই বড় হয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলন তাঁর শিরা-উপশিরায়। এমন সংগ্রামী মানুষ সমাজে বড়ই বিরল। নিজে যা বুঝেছেন তা বলেছেন অদম্য সাহসের সঙ্গে। তাঁর কণ্ঠ কখনও স্তব্ধ করা সম্ভব হয়নি। ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান ছিল তাঁর প্রিয় মাঠ। তাঁর ডাকে অসংখ্যবার কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে এ মাঠ। চট্টগ্রামে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যমণি এ নেতাকে সমীহ না করে পারেনি কোন শক্তি।
মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন প্রায় ১৭ বছর। তাঁর কার্যালয় এবং বাসভবন ছিল অবারিত। তিনি সকলের মেয়র হতে পেরেছিলেন। নগরীর চশমাহিলের বাসায় গিয়ে কেউ খালি মুখে ফিরেছেন এমন রেকর্ড নেই। সহযোগিতা চেয়ে কেউ বিমুখ হননি।
মহান আল্লাহ তাঁকেঁ জান্নাতবাসী করুন।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.