Header Ads



মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে প্রাণ উৎসর্গ করেন চট্টগ্রামের ৪ মুক্তিযোদ্ধা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে প্রাণ উৎসর্গ করেন চট্টগ্রামের ৪ মুক্তিযোদ্ধা।

শহীদ ৪ ছাত্রনেতা হলেন, বশরুজ্জামান চৌধুরী, জাফর আহমদ, দীপক বড়ুয়া ও মাহবুবুল আলম চৌধুরী। 


১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম শহরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে তারা শাহাদাত বরণ করেন।


জানা যায়, এই ৪ যুবক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য রসদ সংগ্রহ করতেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিষয়টি জানতে পেরে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রসদ নিয়ে যাওয়ার পথে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে হত্যা করে।


চট্টগ্রামে তারাই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক নাসিরউদ্দিন চৌধুরী।


তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমানের মতে, এই ৪ জন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের প্রথম দিকের শহীদদের মধ্যে ছিলেন। তবে তারা চট্টগ্রাম শহরে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ কি না বিষয়টি নিশ্চিত নয়।


তিনি আরও বলেন, 'আমি চট্টগ্রামে অন্তত ২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে চিনি; যারা ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।'


মুক্তিযুদ্ধের ৪ শহীদের স্মরণে চেরাগী পাহাড় মোড়ে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে।

জানা গেছে, বশরুজ্জামানের বাবা ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান চৌধুরী আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। স্বাধীনতার উত্তাল দিনগুলোতে পাথরঘাটায় বশরুজ্জামানের বাড়ি 'জুপিটার হাউস' ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। জুপিটার হাউস মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উন্মুক্ত ছিল।


জাফর আহমদের বাড়ি মাদারবাড়ি এলাকায়। তিনি সিটি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। অন্যদিকে কক্সবাজারের উখিয়ার বাসিন্দা দীপক বড়ুয়া চট্টগ্রাম শহরের এনায়েত বাজার এলাকায় থাকতেন। 


নাইট কলেজের ছাত্র মাহবুবুল আলম চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায়।


ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক নাসিরউদ্দিন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২৬ মার্চ চট্টগ্রামে ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করেছিলেন এবং তারা ছাত্র ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়।'


'তখন কাজির দেউড়ির দক্ষিণ পাশের নৌ ভবনে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৭ মার্চ ছাত্রলীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মোসলেম উদ্দিনকে আটক করে। এরপর ২৮ মার্চ একদল পাকিস্তানি সেনা বিমান অফিসের পাশে অন্ধকার গলির মুখে অবস্থান নেয় এবং লাভ লেন হয়ে ডিসি হিলে উঠে যায়।'  


তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রসদ বহনকারী ৪ যুবকের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছিল উল্লেখ করে নাসিরউদ্দিন বলেন, 'পাকিস্তানি বাহিনী ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে অতর্কিত হামলা চালানোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।'


'৪ যুবক এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রসদ নিয়ে মোটরগাড়িতে করে ওই পথ দিয়ে আসছিলেন।'       


তাদের গাড়ি আন্দরকিল্লা হয়ে মোমিন রোডের চেরাগী পাহাড় মোড়ের দিকে এলে পাকিস্তানি বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায়। সেখানে ৪ ছাত্রনেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় চেরাগী পাহাড় মোড়ের পিচ ঢালা রাস্তা, জানান নাসিরউদ্দিন।


ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত 'বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম' বইতেও এই ৪ মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।


চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র  মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'চট্টগ্রাম মহানগরীতে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে জামালখান মোড়ে পাক হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের প্রথম শহীদ বশরুজ্জামান চৌধুরী, মাহবুবুল আলম চৌধুরী, দীপক বড়ুয়া ও জাফর আহমদের নামে যে স্মৃতি ফলকটি চেরাগী পাহাড়ের মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে, তা ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দৃশ্যমান স্থানে পুনঃস্থাপন করা হবে।'

কোন মন্তব্য নেই

please do not enter any spam link in the comment box.

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.