আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে অমিশ্রিত ভাবে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলি।
পৃথিবীতে ভাষার দাবীতে বাঙ্গালী জাতিই প্রথম রক্ত দিয়ে আপন ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেন।
পৃথিবীর প্রত্যেক
প্রাণীর একটি নিজস্ব ভাষা আছে যা দিয়ে নিজ নিজ মনের ভাব প্রকাশ করে,অনন্যান্য প্রাণী বিভিন্ন শব্দ বা আওয়াজ দিয়ে একে অন্যের সাথে
যোগাযোগ বা মনের ভাব প্রকাশ করলেও স্রষ্টার সৃষ্টিতে একমাত্র জীব মানুষ যারা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন গোত্রে
বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে মনের ভাব আদানপ্রদান করেন।
তেমনি বাংলা
আমাদের মাতৃভাষা,বাংলা আমাদের মায়ের
ভাষা,আমরা মাতৃক্রোড়েই প্রথম আধো-আধো ভোলে মা,বাবা,দাদা শব্দ গুলি বলে
বলেই মধুর ভাষা বাংলা শিক্ষা শুরু করি।
আমাদের সে
মায়ের ভাষা,মাতৃভাষা বাংলার উপর আঘাত আসে পাকিস্তান
নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পর।
সাল ১৯৪৭
উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে-সৃষ্টি হয় পাকিস্তান,পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই শুরু হয় বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
আঘাত আসে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষাভাষী বাঙ্গালীর বাংলা ভাষার উপর,পাকিস্তানি স্বৈরশাসক
আরবি হরফে বাংলা লেখার ষড়যন্ত্র করে।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তান
গনপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দুর পাশাপাশি বাংলা বব্যহারের দাবী উত্থাপন করেন
কিন্তু পাকিস্তান গণপরিষদে ও ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষণা দিলে বাঙ্গালী ছাত্র-সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলা
ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে,ডাক দেয় হরতাল/ধর্মঘটের
সে আন্দোলনে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,শামসুল হক,অলি আহাদসহ অনেক
ছাত্রনেতা।
বাংলা ভাষাকে
রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়ার দাবীতে আন্দোলন অব্যাহত থাকে,১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ
মিছিল করলে পাকিস্তানী স্বৈরশাসকের পেটুয়া বাহিনী মিছিলে গুলি চালায় সালাম,বরকত রফিক,জাব্বার, সফিকসহ অনেকেই শহীদহন, ভাষারদাবীতে শুরু করা আন্দোলন পরিণত হয় গন-আন্দোলনে।
পৃথিবীতে ভাষার দাবীতে বাঙ্গালী জাতিই প্রথম রক্ত দিয়ে আপন ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেন।অবশেষে পাকিস্তান বাংলাভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হন পাকিস্তানী স্বৈররশাসক।
সেদিন থেকে
২১ ফেব্রুয়ারী বাঙ্গালী জাতির জন্য গৌরের দিন,শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্টার দিন,২১ ফেব্রুয়ারী এখন শুধু বাংলা ভাষাভাষী নয়,সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
কিন্তু দুঃখজনক
হলেও সত্য,
রক্তের বিনিময়ে
অর্জিত বাংলাকে আজ আমরা বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণে বিকৃত ভাবে কথা বলছি,জারি সারি ভাটিয়ালি ভাওয়াইয়,দেশাত্মবোধক গানে ভিনদেশী সুরের মিশ্রণে বিকৃত সুরে গান করছি
যা মোটেই শোভন নয়।
তাই আসুন
আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে অমিশ্রিত ভাবে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলি,আপন সুরে গান করি।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.