Header Ads



মৌলভী সৈয়দ বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদকারী "প্রথম শহীদ":হাসান মনসুর।


মৌলভী সৈয়দ বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদকারী "প্রথম শহীদ


বিপ্লবী সূর্য সেন এর সুযোগ্য বিপ্লবী উত্তরাধিকার - চট্টগ্রাম এর অহংকার "শহীদ মৌলভী সৈয়দ"।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার মাসে আমরা অনেকেই অনেক কথা বলি - তবে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরপরই  বুক চিতিয়ে সর্বপ্রথম নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন চট্টগ্রামের একজন "মৌলবী সৈয়দ"। ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে - দৃশ্যমান বীরোচিত লড়াই করেন এই "মুজিব প্রেমিক"। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর রত্নগর্ভ সন্তান "মৌলবি সৈয়দ বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে "প্রথম শহীদ"। বিপ্লবী সূর্য সেন এর সুযোগ্য বিপ্লবী উত্তরাধিকার - চট্টগ্রাম এর অহংকার "শহীদ মৌলভী সৈয়দ" ।১৯৪৪ সালের ১১ মার্চ বাঁশখালী শেখেরখীল "লালজীবন" গ্রামে তার জন্ম ।


মাদ্রাসার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তিনি ছিলেন

ড় সাংস্কৃতিকমনা একজন মানুষ। এরপর চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ভর্তি হন। পিতা একরাম আলী সিকদার, মাতা ওমেদা খাতুন। ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক দুরদর্শিতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও যোগ্যতার বলে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁকে বাঁশখালী সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয় প্রদান করেন। 


পোষ্টার, লিফলেট, ফেষ্টুন ও ব্যানার ছাপানোর কাজ শেষ করে তিনি যখন ভোটযুদ্ধে অবতির্ণ হলেন - ঠিকসময় ঢাকা থেকে খবর আসলো তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে বাঁশখালীতে শাহ-ই-জাহান চৌধুরীকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। এই কথা শুনে তিনি এতটুকু বিচলিত হননি বা তার মাঝে কোন ধরনের ক্ষোভ দেখা যায়নি। 


বঙ্গবন্ধু প্রেমিক মৌলভী সৈয়দ সেইদিন দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দলীয় প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করে এম.পি বানিয়ে ছিলেন। মৌলবি সৈয়দ পদ, পদবীর তোয়াক্কা করতেন না কখনোই ।মৌলভী সৈয়দ প্রচুর লেখা পড়া করতেন, তিনি ভালো গান গাইতেন, তার একটি ব্যক্তিগত লাইব্রেরীও ছিল।


আগ্রাবাদ  মিস্ত্রী পাড়ায় বর্তমান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা Syed Mahmudul Hoque এর পৈতৃক বাড়ীতে তার চট্টগ্রাম শহর কেন্দ্রিক ঘাঁটিটি ছিল। এই বাড়ী থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন - পরে এখান থেকেই প্রাথমিক অবস্থায় পরিচালিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু  হত্যার প্রতিবাদী আন্দোলন।


শহীদ মৌলভী সৈয়দ  - বঙ্গবন্ধু খুনী বেঈমান খন্দকার মুস্তাকের প্রান নাশের পরিকল্পনা করেছিলেন। দুর্ভাগ্য চাকচিক্যময় ডিজিটাল রাজনীতির যুগে এই নামটি বিস্মৃতির অতলে চলে যেতে বসেছে - তার আত্মত্যাগ ও বীরত্ব গাঁথা নিয়ে সেরকম কোনো আলোচনা হয়না। একজন মরহুম শহীদের কৃতিত্ব  কে বড় করে দেখাতেও - যেন একরকম হীনমন্যতা। 


চট্টলার মানুষের কাছে  "মুলই সৈয়দ" নামেই ব্যাপকভাবে পরিচিত।  চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তী -ইমানদারি রাজনীতির মূর্ত প্রতীক এই বিপ্লবী "মৌলবী সৈয়দ "।১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ আন্দোলনকারী হিসেবে ঘুরেফিরে যাদের নাম উঠে আসে তাদের মধ্যে তিনি সহ মরহুম  এ, বি, এম মহিউদ্দিন চৌধুরী , মরহুম সুলতানুল কবির চৌধুরী এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ সহ অনেকের নাম উঠে আসে। 


এরা সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন দেশের সীমানার ভিতরেই - তবে ভারত বর্ডার ক্রস করে দেশ এর ভিতরে ঢুকে অপারেশনে অংশ নিতেন মৌলবি সৈয়দ। যখন কালো মুজিব কোট বদলিয়ে আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতা খুনি মোস্তাকের মন্ত্রীসভায় যোগদানের জন্য উদগ্রীব ছিলেন , অনেক আওয়ামীলীগ মন্ত্রী , এম পি র বাসার ড্রয়িং রুম থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলেছিলেন তখন চট্টগ্রামের মৌলভী সৈয়দ অস্ত্র আর গ্রেনেড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন দেশের বিভিন্ন স্থানের সামরিক চৌকিতে।



১৯৭০ সালে মুক্তিযুদ্ধের ডামাডোলের সময় লালদিঘীর মাঠে জয় বাংলা বাহিনীর মার্চপাষ্ট অনুষ্ঠিত হল - সিদ্ধান্ত পাকিস্তানি পতাকা পুড়ানো হবে – যথারীতি মৌলভী সৈয়দ বীরদর্পে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন আর পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে ফেলেন। তিনি ছিলেন অনলবর্ষী বক্তা। তার বক্তৃতা শুনে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হত সাধারন মানুষ। 


তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন দুর্ধর্ষ একটি গোপন গেরিলা স্কোয়াড। তার দল “মৌলভী সৈয়দ বাহিনী” নামে পরিচিত ছিল। এই মহান বীরের নেতৃত্বে অন্তত অর্ধশত বড় বড় সফল অপারেশন সংঘটিত হয়েছে। 


চট্টগ্রামের প্রয়াত জননেতা জহুর আহম্মেদ চৌধুরীর কাছে রাজনৈতিক দীক্ষায় অনুপ্রানিত হয়ে ছাত্রাবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করেন মৌলভী সৈয়দ । চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ও আস্থাভাজন কয়েকজনের যুবনেতার মধ্যে মৌলভী সৈয়দ ছিলেন অন্যতম। বঙ্গবন্ধু তাকে  “আমার মৌলভী সাব” বলে ডাকতেন। চট্টগাম সফরে গেলে তিনি প্রিয় সৈয়দকে সাথে রাখতেন সব সময়। মাঝে মধ্যে ঢাকাতে খবর দিয়ে আনাতেন। 


১৯৭৫ এর  নভেম্বর এর দিকে তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে  কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করেছিলেন - ঘাতকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। ৭৫ এর ৩ নভেম্বর খালেদা মোশারফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খালেদ মোশারফের পক্ষে ঢাকার সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন এই বীর । ৭ নভেম্বর পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যে যখন খালেদ মোশারফ নিহত হন তখন মৌলভী সৈয়দ,এ.বি.এম মহিউদ্দীন চৌধুরী সহ পুরো দলটি ভারতে আশ্রয় নেন। 


১৯৭৬ সালের ৭ নভেম্বর দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মৌলভী সৈয়দ কে ১ নং ও এ.বি.এম মহিউদ্দীন চৌধুরীকে ২ নং আসামী করে মোট ১৬ জন বিপ্লবী নেতা কর্মীকে মামলা-১, মামলা-২,মামলা-৩ নামে পরিচিত ৩ টি মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে Mrs  Indira Gandhi র দল পরাজিত হলে মৌলভী সৈয়দ ও সহকর্মীদের ভারতীয় সামরিক বাহিনী আটক কর ময়মনসিংহ বর্ডার দিয়ে পুশব্যাক করে।


বাংলাদেশের সীমানার প্রবেশের সাথে সাথে সেদিন মৌলভী সৈয়দ সহ তার অনেক সহকর্মী বাংলাদেশের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে তাদের ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের জায়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। ঐ বছরের ১১ আগষ্ট বিনা বিচারে মৌলভী সৈয়দকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।  সংগ্রামের মাধ্যমে যার জীবন শুরু  - সংগ্রাম করেই জীবন দিয়ে গেলেন বীর  শহীদ মৌলভী সৈয়দ। নির্মম ভাবে হত্যার পর তার লাশ সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে তার লাশ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয় - এবং  দীর্ঘ ১ মাস পুলিশ দিয়ে কবর পাহাড়া দেয় সামরিক সরকার। 


কিরকম ভয় পেত তৎকালীন সরকার তাকে - এই ঘটনা থেকেই বুঝা যায় । 

চিরকুমার  শহীদ মৌলভী সৈয়দ বীর প্রসবিনী চট্টলার   বীর পুরুষ , প্রতিবাদের আইকন। চট্টগ্রামের বাশখালিতে চির নিদ্রায় কবরে শুয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু পাগল এই মানুষটি - তার স্মরণে কিছুই করেনি কোনো সরকার।  ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে যেন মনে রাখতে পারে - সে জন্য তার নামে কোনো স্থাপনা করা উচিৎ বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের। লাল সালাম বিপ্লবী বীর  মৌলভী সৈয়দ ।

 হাসান মনসুর:সাঃ সম্পাদক(সাবেক)কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগ-চট্টগ্রাম মহানগর।

কোন মন্তব্য নেই

please do not enter any spam link in the comment box.

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.