Header Ads



ইমাম হচ্ছেন সমাজের সবচেয়ে সম্মানী ও মর্যাদাশালী ব্যক্তি।

 

ইমাম হচ্ছেন সমাজের সবচেয়ে সম্মানী

ইমাম এবং ইমামতি বিষয়টা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।ইমাম দুই প্রকার প্রথমত,ইমামতে কুবরা দ্বিতীয়ত,ইমামতে সুগরা।

ইমাম শব্দটি আরবী, তার বাংলা অর্থ হচ্ছে নেতা, প্রধান, নামাজের ইমাম, অগ্রণী, দিক-নির্দেশক, আদর্শ নমুনা ইত্যাদি। সাধারণত ইমাম বলা হয় যাকে অনুসরণ করা হয়। কর্মের মাঝে যিনি সবার আগে থাকে। যেমন নবী করীম (সাঃ) হলেন নবীদের ইমাম, খলিফা মুসলমানদের ইমাম, সেনাপতি সৈন্যদের ইমাম।

নামাজের ইমাম বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে, যিনি মুসল্লীদের মাঝে সবার আগে থাকেন, নামাজের ক্রিয়াগুলোতে যাকে পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়।নামাজের ইমামতি হচ্ছে একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ শরয়ী দায়িত্ব। যেমন মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “জাতির ইমাম হবে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর কিতাব অধিক ভাল পড়তে পারেন”। এতে প্রতীয়মান হয় ইমামতের মর্যাদা সবার উপরে।

ইমাম হচ্ছেন সমাজের সবচেয়ে সম্মানী ও মর্যাদাশালী ব্যক্তি। ইমাম শব্দটি কোরআনুল কারিমে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। সুরা বাকারার ১২৪ নম্বর আয়াতে ইমাম অর্থ ‘নেতা’ বলে উল্লেখ হয়েছে।

وَ اِذِ ابۡتَلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ رَبُّهٗ بِکَلِمٰتٍ فَاَتَمَّهُنَّ ؕ قَالَ اِنِّیۡ جَاعِلُکَ لِلنَّاسِ اِمَامًا ؕ قَالَ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ ؕ قَالَ لَا یَنَالُ عَهۡدِی الظّٰلِمِیۡنَ

আর স্মরণ করুন, যখন ইবরাহীমকে তার রব কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন,অতঃপর তিনি সেগুলো পূর্ণ করেছিলেন। আল্লাহ্‌ বললেন, নিশ্চয় আমি আপনাকে মানুষের ইমাম‘নেতা’ বানাবো। তিনি বললেন, ‘আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও?’ (আল্লাহ) বললেন, আমার প্রতিশ্রুতি যালিমদেরকে পাবে না।

 সুরা হুদের ১৭ নম্বর আয়াতে ইমাম অর্থ ‘পথপ্রদর্শক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন, ‘আর পূর্ববর্তী মুসার কিতাব যা ছিল পথপ্রদর্শক ও রহমত।’

ইমাম এবং ইমামতি বিষয়টা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইমামত দুই ধরনের হতে পারে, প্রথমত, ‘ইমামতে কুবরা’—বড় ইমামতি এমন ব্যক্তিকে ইমামে কুবরা বলা হয়, যে বিশেষ জ্ঞানে পারদর্শী এবং সেই জ্ঞানে সে অনুকরণীয় । তাই হাদীস শাস্ত্রে বুখারী (রঃ)কে ইমাম বুখারী বলা হয়। ফিকাহ শাস্ত্রে হযরত আবু হানীফা(রঃ),হযরত মালেক(রঃ),হযরত শাফেয়ী(রঃ)হযরত আহাম্মদ ইবনে হাম্বল(রঃ) ইত্যাদি উলামাগণের নামের শুরুতে ইমাম লেখা হয়।। দ্বিতীয়ত, ‘ইমামতে সুগরা’—ছোট ইমামতি নামাজের ইমামত ও মসজিদ কেন্দ্রিক সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করা। আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স) নবুওয়াতের মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন,তিনি নামাজের ইমামতিও করেছেন।

ইমামতির ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। মানব সৃষ্টির সূচনা থেকে আল্লাহ পাক মানবজাতিকে সুপথে পরিচালনা ও মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যুগে যুগে, তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত নবী রাসূলগণই জনসাধারণকে হেদায়াতের বাণী শুনিয়েছেন এবং ইমামতি করেছেন। নবী (সাঃ) এই গুরুদায়িত্ব পালনে পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন। নবী (সাঃ) এর ইন্তিকাল পরবর্তী তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি সাহাবায়ে ক্বেরাম (রাঃ) এই মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। মহানবী (সাঃ) এর রেখে যাওয়া এই গুরুদায়িত্ব বর্তমানে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করা উচিত। ইমাম-তারা হলেন, রাসূল (সাঃ)-এর যোগ্য উত্তরসূরি। কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আলেমগণই হলেন নবীদের ওয়ারিশ।” আলেমগণও সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।

মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সূরা ফুরকানে মুমিন এর ১৩টি গুণের বর্ণনা দিয়েছেন। তার মাঝে একটি গুণ হলো- মুমিনরা আল্লাহ্র দরবারে এই বলে প্রার্থনা করবে যে, “হে প্রভু আমাদের মুত্তাকীনদের ইমাম বানিয়ে দিন। সুতরাং একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্যই হলো ইমামতের আকাক্সক্ষা পোষণ করা।

ইমামত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া এক বিশেষ পুরস্কার বা নেয়ামত। যেমন আল্লাহ তা’য়ালা সূরা সিজদার ২৪ নং আয়াতে ইরশাদ করেন,وَ جَعَلۡنَا مِنۡهُمۡ اَئِمَّۃً یَّهۡدُوۡنَ بِاَمۡرِنَا لَمَّا صَبَرُوۡا ۟ؕ وَ کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یُوۡقِنُوۡنَ “আমি তাদেরকেই ইমামত দান করেছি যারা আমার আদেশের উপর অটল-অবিচল থাকে এবং আমার নিদর্শনাবলীর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।

মসজিদের ইমাম সমাজেরও ইমাম : ইমামতি সাধারণ কোনো পেশা নয়। এর রয়েছে অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেবার মানসিকতা নিয়েই এ পেশায় আত্মনিয়োগ করা উচিত। একজন ইমাম শুধু মসজিদের ইমাম নয়; বরং তিনি সমাজেরও ইমাম। মানুষ, মনুষ্যত্ব ও সমাজ নিয়েও একজন নবীর উত্তরাধিকারী ইমামকে ভাবতে হবে। একজন ইমাম হতে পারেন মানবতার পথপ্রদর্শক। ইমাম বোধসম্পন্ন হলে, তার সংশ্রবে থেকে মুসল্লিরা ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতার গুণ শেখে। একজন ইমামই পারেন দিকভ্রান্ত মানুষকে সরল পথে পরিচালিত করতে। আল্লাহর সত্তার সঙ্গে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে। ইমামকে সবার আস্থাভাজন হওয়া বাঞ্ছণীয়। যেন সবাই নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, জাগতিক ও ধর্মীয় সব বিষয়ে মতের আদান-প্রদান করতে পারেন। লেনদেন, বিয়ে-শাদি ও অন্যান্য কার্যক্রমে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন।

অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জার বিষয় হলো- আমাদের দেশে যারা দেশ ও জাতিকে এই মহৎ সেবাটি নিঃস্বার্থভাবে দিতে পারবেন তাঁদের ও তাঁদের পেশাকে ছোট দৃষ্টিতে দেখা হয়।  বাংলাদেশে দেখা যায় যে সিংহভাগ মসজিদের ইমামগণই মসজিদ কমিটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইমামগণ অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা কিংবা সত্য বলার অধিকার থেকে বঞ্চিত। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারি কিংবা অন্য কোনো সদস্যের সাথে ইমামের মনোমালিন্য হলেই ইমাম সাহেবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কারণে অকারণে ইমাম সাহেবদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এর জন্য কমিটি কোনো নীতিমালার অনুসরণ করে না এবং মসজিদ কমিটিকে কারো কাছে জবাবদিহিতাও করতে হয় না।

আল্লাহ্ আমাদের সকলকে বুঝার তাওফীক দান-আমিন



কোন মন্তব্য নেই

please do not enter any spam link in the comment box.

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.