বেলায়তের এতকালের অপ্রতিরোদ্ধ আশাবাদে চির ধরেছে দেখে বুকে কোথাও চিনচিন করে উঠেছিল:বেলাল বেগ

বহু আগে পরিত্যাক্ত মুস্লিম লীগ আদর্শের আদলে সৃষ্ট বিএনপি চালু রাখা ইত্যাদি বিষয়গুলি আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগুলির বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব করে রাখছে।

 

"শ্রদ্ধেয় দাদা সালাম নিবেন। এখও যে সময়টা আছে একটা দুইটা বই লিখে যান। পরবর্তী প্রজন্ম চলার পথের দিশা পাবে। সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মনে হয়।" এই মন্তব্যদাতা যাঁর ফটো এখানে দেয়া আছে, চট্টগাম শহরে বাওয়া স্কুলের উপদেস্টা, এ কে এম বেলায়েত হোসেন চট্টগ্রাম আওয়ামি লীগের দীর্ঘ কালের সিনিয়র নেতা।  নিখাদ দেশপ্রেমিক এবং সমাজসেবক বেলায়েত হোসেন চট্টগ্রামের হালিশহরে 'রাবেয়া বসরী' নামে নিজেও একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বেলায়েৎ  আমার বয়ঃকনিষ্ঠ আত্মীয়। আমার কাছে তাঁর অনেক প্রত্যাশা। চট্টগ্রাম গেলে তিনি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে উপস্থাপন ছাড়াও গন্যমান্য ব্যক্তিদের সংগে আলাপ করিয়ে দেন। আজকে আমার হাতে জীবনের কম সময় থাকার বিষটি উল্লেখ করে আমাকে বরাবরের মত আবার অনুরোধ করেছেন ভবিশ্যত বংশধরদের পাথেয় হিসাবে দুই একটি বই লেখার জন্য। আমার শুভানুধ্যায়ীদের এ জাতীয় কথাকে আমি সযত্নে এড়িয়ে যাই। কিন্তু আজ পারলাম না বেলায়েৎ'র ব্যবহৃত একটি এই বাক্যটির জন্য, "সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মনে হয়"।

কথাটি আমাকে বিদ্যুৎ শকের মত নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল; বেলায়তের এতকালের অপ্রতিরোদ্ধ আশাবাদে চির ধরেছে দেখে বুকে কোথাও চিনচিন করে উঠেছিল। বেলায়েৎ হোসেনকে চিনি বলে আমি ঠিক জেনে গেছি তাঁর মনে কি আছে। বেলায়েৎ আজ যা প্রত্যক্ষ করছেন অন্ততঃ দুই দশক আগে তাঁর সুপ্রিম নেতৃ মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার কথা প্রকাশ্যে বলেছেন, "দেশের সকল প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে গেছে। দেশের সর্বোচ্চ এই নেতারও অনেক আগে প্রথাবিরুদ্ধ লেখক, চিন্তাবীদ, গবেষক ড. হুমায়ুন আজাদও বলে গেছেন, "সব কিছু আজ নষ্টের দখলে" অর্থাৎ সমাজের কোন প্রতিষ্ঠানই কাজ করে না, শিক্ষা, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, উকিল, ডাক্তার, পুলিশ, রাজনৈতিক দল এমন কি পরিবার, বন্ধু বান্ধবী, কাউকেই আজ আর তাদের শ্বাশ্বত রূপে দেখা যায় না।

এরই বিষময় ফলে বাংলাদেশ আজ একটি দুষিত সমাজ, 'সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই" বলা ইতিহাস আলো করা সমাজটিতে আজ মানুষে মানুষে শ্রদ্ধআ ভালবাসা, স্নেহমায়া প্রেম প্রীতির পরিবর্তে বিরাজ করছে হিংসা, বিদ্বেষ, শ্ত্রুতা, অবিশ্বাস আর হানাহানি রক্তপাতের স্পম্পর্ক। এই মারাত্মক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে একটি মাত্র কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আদর্শগুলির প্রতিষ্ঠা হয়নি, পরাজিত শত্রুদের  ক্ষমতা সম্পূর্নভাবে নিশ্চিহ্ন হয় নি। গরীব ছেমেয়েদের জন্য মাদ্রাসা নামক জীবন বিমুখ শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ জামাতে ইসলামীর ধর্মধাপ্পা-রাজনীতি, জামায়াতকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বহু আগে পরিত্যাক্ত মুস্লিম লীগ আদর্শের আদলে সৃষ্ট বিএনপি চালু রাখা ইত্যাদি বিষয়গুলি আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগুলির বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব করে রাখছে।

আমাদের অচিন্ত্যনীয় উন্নতি সত্বেও তাই আমাদের সমাজে ডাল মে কালা থেকেই যাচ্ছে; সব কিছু আরও এলোমেলো হয়ে যাবে যেভাবে সমাজ চলছে, সেভাবে চললে। সমাজ ও শিক্ষা বিদ্যার ছাত্র হিসাবে, তাই আমি বুঝি লেখালেখি দিয়ে কাজ হবে না, কাজ হবে প্রকৃত জনমুখি রাজনীতি দ্বারা যা এতগুলি পার্টি থাকা সত্বেও বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশে আজো আসে নি। এখন চলছে ক্ষমতার রাজনীতি 'সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই' রাজনীতির কোন লক্ষনও নাই গলাবাজীর বাংলাদেশে।