Header Ads



প্রদীপ খাস্তগীর নিভৃতচারী,প্রচারবিমুখ ত্যাগী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কলমযোদ্ধা-হাসান মনসুর

বিপ্লবী নেতা সদ্য প্রয়াত এ,বি,এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে থেকে ফেরারি জীবন কাটিয়েছিলেন প্রদীপ খাস্তগীর ।

প্রদীপ খাস্তগীর নিভৃতচারী,প্রচারবিমুখ ত্যাগী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের
প্রদীপ খাস্তগীর-হাসান মনসুর 
প্রদীপ খাস্তগীর

প্রদীপ খাস্তগীর। নিভৃতচারী , প্রচারবিমুখ ত্যাগী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন তুমুল তুখোড়,ঝাঁঝালো প্রতিবাদী , কলমযোদ্ধা। পটিয়ার সন্তান - বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রদীপ খাস্তগীর চট্টগ্রাম মহানগরের আওয়ামীলীগ পরিবারের পরিচিত এক মুখ।আওয়ামীলীগ করে এই শহরে সবাই মোটামুটি  তার চেহারা চিনে। আওয়ামীলীগের পক্ষে ক্ষুরধার লিখনি আর দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের পত্রিকার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লিখতে , ড্রাফট করতে - অনিবার্য এক নাম " প্রদী্প খাস্তগীর"। পিতৃতুল্য এই মানুষটি  লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর।  না , তিনি পালিয়ে যাননি বা ব্যাবসাতে মন বসাননি , তিনি যোগ দিয়েছিলেন জাতির জনক হত্যার প্রতিবাদে।  পরে দেশে টিকতে না পেরে ভারতে পালিয়েছিলেন। সেখানে তিনি - বিপ্লবী নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা  এ,বি,এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে থেকে ফেরারি জীবন কাটিয়েছিলেন।  কলকাতা শহরে কখনো পত্রিকার হকারি অথবা চায়ের দোকানে তিনি কাজ করতেন আর এ,বি,এম মহিউদ্দিন চৌধুরী কাজ করতেন খাবার হোটেলের ম্যানেজার হিসেবে ।

পাশাপাশি  তারা দেখভাল করতেন কলকাতা শহরে আশ্রয় নেওয়া  হুলিয়া নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে আসা  প্রতিবাদী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের।  খ্যাতিযশ , অর্থ , পদ পদবী , জৌলুষ কিছুর মোহই তার ছিল না, এখনো তা হয়নি। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা পুরোপুরি পোক্ত হয়ে যাবার পর - আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা যখন কমে আসে, তখন তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন।  যোগ দেন ১৫ই আগস্ট নিহত মরহুম শেখ ফজলুল হক মনির পত্রিকা "বাংলার বাণী"তে। মুলত ১৯৭৫ এর দুঃখজনক ঘটনার পর "বঙ্গবন্ধু" ও "আওয়ামীলীগের"র কথা ছাপার অক্ষরে লিখা হত একমাত্র শেখ সেলিম সম্পাদিত  "বাংলার বানী" পত্রিকায়। জিয়া, এরশাদের সামরিক শাসন , নির্যাতন , হুলিয়া , চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে- আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে শেখ সেলিম ও তার ভাইয়েরা এই পত্রিকা প্রকাশ করতো , আমাদের প্রদীপ কাকা পালন করতেন এই পত্রিকার সহ সম্পাদকের দায়িত্ব। পরে তিনি ফিরে আসেন চট্টগ্রামে। বাংলা সাহিত্যে পণ্ডিত , বিজ্ঞ আর আদর্শে বলীয়ান এই মানুষটির কাছে সম্পদ বলতে ছিল একটাই "কলম"। পরে  তার পুরোনা সহকর্মী চট্টলবীর এ,বি,এম মহিউদদিন চৌধুরী তাকে আমৃত্যু সাথেই রেখে দিয়েছিলেন -  দায়িত্ব দিয়েছিলেন দলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি , প্রচার আর লেখালেখির দিকটা। তখন থেকেই ,চির তরুন এই মানুষটার ঠিকানা হল প্রিয় চট্টগ্রাম আর  লালদিঘীর পাড়ের "চট্টগ্রাম বোর্ডিং"।

 চিরসবুজ - ব্যাচেলরদের মতো চলাফেরা করা মানুষটির দিন কাটেই দেশ, লেখালেখি ও রাজনীতি নিয়ে।উনার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা হয় ২০০৩ সালের জামালখানের রিমা কমুনিটি সেন্টারে। সেদিন আওয়ামীলীগের কোতোয়ালী থানার সম্মেলন হচ্ছিল - স্বাধীনতার পর এই নগরীতে থানা আওয়ামীলীগ ছিলনা , তাই প্রথম থানার সম্মেলন হিসেবে খুব উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল।কমিটিতে দফতর সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করা হল প্রদীপ খাস্তগির আর সহ- দফতর সম্পাদক হিসেবে আমার নাম। উনার নাম শুনে উনি নিজেই চেঁচিয়ে বললেন - এই বয়সে আমার পদের দরকার কি ? মহিউদ্দিন ভাই আর কাজ পান নাই আর কি। তখন সভাপতি ছিলেন জননেতা মরহুম এম এ মান্নান আর সাধারণ সম্পাদক মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।সম্মেলন শেষ করে রাতে আমি গেলাম আমাদের নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর চশমা হিলের বাসায় । প্রদিপ কাকা আমাকে দেখে  বললেন  - তুমি আমার assistant - স্বাধীনতার উত্তাল সময়ে আমি তোমার বাবার অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলাম। প্রদীপ কাকা আমার বাবার সরাসরি ছাত্র ছিলেন।রাজনীতি এবং সংস্কৃতি অঙ্গনে দুজনেই একসাথে কাজ করতেন। উনাকে মাঝে মাঝে মনের ভুলে দাদা বললে - উনি খেপে যেতেন -  তুমি আমার ভাইপুত - আমাকে কাকা বলবে। আস্তে আস্তে কাকার সাথে হৃদ্যতা বেড়ে যায়। মাস তিনেকের মাথায় তিনি একদিন কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় - দাঁড়িয়ে বললেন , আজ থেকে আমার ভাইপুত দফতর সম্পাদক , মহিউদ্দিন ভাইয়ের নিউজ আর  পার্টির নিউজ করতে করতেই আমার দিন শেষ, থানার পদ নিয়ে আমি কি করবো।

আমার এই বয়সে কাকাকে কোনোদিন বক্তৃতা দিতে দেখি নাই, মঞ্চে গিয়ে বসতে দেখি নাই, নেতাদের সাথে ধাক্কা ধাক্কি করতে দেখি নাই - সাধাসিধে ছিপছিপে গড়নের সাদা পাকা চুলের প্রদীপদা -- দলের ছেলে বুড়োর কাছে পরিচিত এক মুখ।আজকের প্রজন্মের অনেকেই জানেনা তার সংগ্রামী জীবনের অধ্যায় , ত্যাগ , সাহস আর ঝুকির গল্প। এখনো কাকার দিন কাটে "চিটাগং বোর্ডিং" এর সিঙ্গেল রুমে ছোট এক খাটে ( ছারপোকার দাগ দেয়াল জুড়ে) -- অথচ আওয়ামীলীগের দুর্দিনে একবারের জন্যও ভুলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত করে নাই এরকম অনেক লোক - দলের নাম বেঁচে আজ মহাপরাক্রমশালী, টাকাওয়ালা  হয়েছেন। একবার মহিউদ্দিন ভাই বাসায় বসে নেতা কর্মীদের সাথে বসে কথা বলছিলেন - এমন সময় তার মনে হল - প্রদীপ খাস্তগিরের কথা। খবর নিয়ে জানলেন, তিনি অসুস্থ। তিনি সাথে সাথে এম্বুলেন্সে করে ডাক্তার সমেত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন হাসপাতালে - এর কিছুদিন পর নেতা নিজেই চলে গেলেন পরপারে।

 একমাত্র - প্রদীপ খাস্তগীর কাকাকে  দেখেছি আমাদের নেতা মরহুম এ,বি,এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে নিঃসংকোচে - সাবলীল - অবলীলায় কথা বলতে। মহিউদ্দিন ভাই তার বিদ্যা, মেধা,কলমের কদর করতেন। প্রদীপ কাকাকে মহিউদ্দিন ভাই মুখে বকাঝকা করলেও - তিনি একটু সরলেই মহিউদ্দিন ভাই বলতেন -- "এদের মতো কিছু লোকের  লেখা আর সাহসের কারনেই আজ আওয়ামীলীগ আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে। সে লেখাপড়া জানা মানুষ - তাকে সবাই  ইজ্জত করিস"। প্রদীপ কাকা এখনো জীবিত আছেন, দিব্যি সুস্থ আছেন। আমি জানি প্রদীপ কাকাদের মূল্যায়ন হবে একদিন - আমরা সবাই উনার সুনাম আর কীর্তি তুলে ধরবো-  --- তবে তা তার মৃত্যুর পর। দূর্ভাগা আমরা - প্রদীপ কাকাদের আমরা জীবিতকালে কখনো প্রাপ্য সম্মান দেইনা ।এক এক করে চলে যাচ্ছে আমাদের সোনালি দিনের নায়কেরা। জীবিত আছেন মুক্তিযুদ্ধের অবশিষ্ট কিছু বীর  সৈনিক।  আমরা কি পারিনা -  যারা বেঁচে আছে তাদের সম্মানিত করতে? বিভাজনের রাজনীতি আর বিত্ত, প্রতিপত্তি না থাকাতে বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছেন - অনেক সত্যিকারের দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ।

এই মুহূর্তেও শহরের কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আজ  তার দেখভালের খবর লোকের বড়ই অভাব -- দলের জন্য দেশের জন্য সময় দিতে গিয়ে - নিজেকে সাংসারিক , বৈষয়িক সবদিক দিয়ে করেছেন বঞ্চিত।  জীবনের বাকী দিনগুলো

"কাকা"  সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকুক এটাই প্রার্থনা।কাকার সুস্থ সুন্দর দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।

হাসান মনসুর-সাঃ সম্পাদক (সাবেক) কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগর।


কোন মন্তব্য নেই

please do not enter any spam link in the comment box.

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.