প্রিয় নগরবাসী,আমার কাজে সন্তুষ্ট হলে দোয়া করবেন,যদি মনে কষ্ট দিয়ে থাকি ক্ষমা করবেন-সুজন
আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন বলেন প্রিয় নগরবাসী, আমার কাজে যদি আপনারা সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে দোয়া করবেন। আর আমি যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, আমি করজোড়ে আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
দীর্ঘ ছয়মাস দায়িত্ব পালনের শেষদিনে বিদায়বেলায় ভালো কাজের জন্য দোয়া এবং নগরবাসীর কেউ মনে কষ্ট পেলে ক্ষমা চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) নগরীর লালদিঘী পার্কে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পিঠা উৎসবে’দেওয়া বক্তব্যে তিনি এমন আবেগঘন কথা বলেন।
আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন বলেন,আমার বিদায়ের দিন,একেবারে শেষ সময়। আমাকে ছয়টি মাসের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আমি জানি না। আমি আমার সাধ্য মতো, আমার যত যোগ্যতা-দক্ষতা, আমার যা জানা ছিল সবকিছু দিয়েই চেষ্টা করেছি নগরবাসীর সেবা করতে। একটি উন্নত, বাসযোগ্য ও মানবিক শহর উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জানি না কতটুকু সফল হয়েছি।’
আবেগঘন কণ্ঠে আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন বলেন প্রিয় নগরবাসী, আমার কাজে যদি আপনারা সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে দোয়া করবেন। আর আমি যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, আমি করজোড়ে আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। প্রশাসন চালাতে গিয়ে অনেক সময় কঠোর-কাঠিন্যের সঙ্গে চলতে হয়েছে। মেহেরবানী করে আপনারা আমাকে মাফ করে দেবেন। বিশ্বাস করুন, জীবনের শপথ করে বলছি, আমি সততা নিয়ে চলেছি, অসততা করতে চাইনি। আমি যতটুকু পেরেছি, আপনাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য শুভকামনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার পরে যিনি আসছেন, উনি অনেক যোগ্য ব্যক্তি। অনেক ভালো লোক। অনেক শিক্ষিত, মার্জিত ও সংস্কৃতিমনা। আমি আশা করি, তিনি এই শহরকে মানুষের বাসযোগ্য, পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর একটি মানবিক শহর হিসেবে গড়ে তুলবেন। আমাদের প্রিয় চট্টগ্রাম, যে চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে আমাদের জীবন, আমাদের উচ্ছ্বাস- এটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে উনি সর্বতোভাবে চেষ্টা করবেন।’
গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিকের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম,রেজাউল করিম চৌধুরী।১ ফেব্রুয়ারি সুজনের ১৮০ দিনের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
চট্টগ্রামের লালদিঘীর পাড়ে বসেছিল অন্যরকম মিলনমেলা। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের আহ্বানে। দুদিন আগেই সেখানে সুজনের আহ্বানে জ্যোৎস্না উৎসবে মেতেছিলেন শহরবাসী।
সোমবার গ্রামবাংলার আবহমান সংস্কৃতির অংশ পিঠা উৎসবে শহরবাসীকে ডেকেছিলেন সুজন। সাথে মঞ্চে জমেছিল কবিদের কবিতা পাঠের আসর। পিঠা আর কবিতায় আপ্যায়িত হওয়া নাগরিকরা বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এমন আয়োজন আর কখনো হয়নি। এ এক অন্যরকম বিকেল উপহার পেয়েছেন তারা!
‘কিন্তু আজ বড়ই দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি অনেক দূরে সরে চলে গেছে। এজন্য একটি সংস্কৃতিবিহীন বন্ধ্যা রাজনৈতিক পরিবেশে এখন আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে।’
চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আমাদের চিরন্তন বাঙালি সংস্কৃতি, আমাদের মা-দাদিরা যেভাবে পিঠা বানিয়ে গ্রামীণ বাংলার সংস্কৃতি লালন করতেন, সেটাকে নাগরিক জীবনে তুলে ধরার জন্যই এই আয়োজন। এই শহর আমাদের প্রিয় শহর, আমাদের জন্মস্থান। আমাদের শৈশব-কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন এই শহরকে ঘিরেই পার হয়েছে। এই লালদিঘী, কর্ণফুলী নদী আমাদের চট্টগ্রামের প্রাণের কেন্দ্র। সেই লালদিঘীকে কেন্দ্র করেই গত দুদিন ধরে আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।’
মাতৃভাষা চর্চা নিয়ে হীনমন্যতা পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি। ফেব্রুয়ারি বাঙালির হৃদয়জুড়ে, ফেব্রুয়ারি বাঙালির অস্তিত্বের শেকড়জুড়ে থাকা চেতনার নাম। এই ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষার আন্দোলন হয়েছিল এবং একুশে ফেব্রুয়ারির পথ ধরেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, ত্রিশ লাখ মানুষের জীবনদান। কিন্তু একটা বিষয় না বলে পারছি না, আমরা বিয়ের চিঠি দিই আজকাল ইংরেজি ভাষায়। এটা একধরনের হীনমন্যতা। আমরা যার সঙ্গে বাংলায় কথা বলি, তাকে চিঠিটা দিই ইংরেজিতে। কেন, বাংলা কি আমন্ত্রণপত্রের ভাষা হতে পারে না? যে ভাষায় কবিতা লিখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পেয়েছেন, যে ভাষার জন্য বাঙালি সংগ্রাম করেছে, সালাম-জব্বার জীবন দিলেন, যার পথ ধরে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিলেন, সেই ভাষায় কি আমরা একটা চিঠি লিখতে পারি না ?’
‘আমি ইংরেজি ভাষার বিরোধী নই। ভাষা হচ্ছে জ্ঞানের চাবিকাঠি। যতই ভাষা শিখবেন ততই জানবেন। কিন্তু আমাদের জীবনধারার মধ্যে মাতৃভাষার চর্চাটা থাকতে হবে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের মধ্য দিয়েই আমাদের এই হীনমন্যতাটা দূর করে ফেলা উচিত ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা এখনও আমাদের হীনমন্যতাকে ঝেড়ে ফেলতে পারিনি’— বলেন সুজন।
এর আগে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান দিয়ে শুরু হয় উৎসব। আবৃত্তিশিল্পী কঙ্কন দাশের উপস্থাপনায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন কাপাসাগোলা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঞ্চে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি রাশেদ রউফ, আকতার হোসাইন, বিপুল বড়ুয়া, হোসাইন কবীরসহ প্রায় অর্ধশত কবি নিজেদের লেখা কবিতা পাঠ করে শোনান।
উৎসব অঙ্গনে চারটি স্টলে ছিল ভাপা, খেজুরের রস, পুলিপিঠা, পাটিসাপটা, পাকনসহ বিভিন্ন আইটেমের সমাহার। সেখানে অভ্যাগতদের আপ্যায়ন করেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.