দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম নগরী হচ্ছে চট্টগ্রাম – নুরুল আজিম রনি
এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন এবং দক্ষিণ এশিয়ার অবশ্যই প্রাচীনতম নগরী হবে চট্টগ্রাম।
কলকাতার বয়স প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আর ঢাকার বয়স প্রায় চারশ বছর। চট্টগ্রামের বয়স কত? যদি চট্টগ্রামের ইতিহাস সঠিকভাবে গবেষণা করে বের করা সম্ভব হয়, তাহলে চট্টগ্রাম হবে পৃথিবীর প্রাচীন নগরীর মধ্যে দশম। এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন এবং দক্ষিণ এশিয়ার অবশ্যই প্রাচীনতম নগরী হবে চট্টগ্রাম।
ঐতিহাসিক ড. নলিনীকান্ত ভট্টাশালী ‘পেরিপ্লাস অব দি ইরিত্রিয়ান সি’ এ থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেছেন, সেখানে যে ত্রিসের কথা উল্লেখ ছিল সেটা হচ্ছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ। যদি তাই হয়, তাহলে চট্টগ্রামের জনবসতির বয়স প্রায় দুই হাজার বছর।
নৃবিজ্ঞানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাহমান নাসির উদ্দিন ২০১৭ সালে একটি পত্রিকায় লিখেছেন, বর্তমান চট্টগ্রামের অস্তিত্ব ছিল আজ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে। অর্থাত্ আজ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে একটি নগরী হিসেবে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছিল এবং সে বৃহত্তর চট্টগ্রামের অংশ হিসেবে আদিনাথ, চন্দ্রনাথ ও কাঞ্চননাথে জনগণের বসতি ছিল। মহাভারত-এ উল্লিখিত সময়ের হিসাব বিবেচনায় নিলে চট্টগ্রামের অবস্থান পৃথিবী দশম প্রাচীনতম নগরী লেবাননের বৈরুত (৫ হাজার বছর পুরনো) আগে হওয়ার কথা। আর দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন নগরী হিসেবে দাবিকৃত বানারস ও পেশোয়ারের চেয়ে কয়েক হাজার বছর আগের নগরী হিসেবে নিঃসন্দেহে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম নগরী হচ্ছে চট্টগ্রাম।
তিনি বাংলাপিডিয়ার তথ্য তুলে এনে ঐ লেখাতে উল্লেখ করেন, প্রথম দিকে মহাভারত-এর শ্লোক সংখ্যা ছিল আট-দশ হাজার; যা পরবর্তীতে চর্চিত এবং ব্যাখ্যাত হতে হতে যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে লক্ষাধিক। মহাভারত-এর নানা শ্লোকে আদিনাথ, চন্দ্রনাথ ও কাঞ্চননাথের উল্লেখ আছে জনবসতির নিদর্শনস্বরূপ; যা থেকে অনুমান করা যায় যে, মহাভারত-এর রচনাকালেও বর্তমান চট্টগ্রামের বিখ্যাত আদিনাথ, চন্দ্রনাথ ও কাঞ্চননাথের অস্তিত্ব ছিল এবং সেখানে জনবসতির ছিল। মহাভারত রচিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে আরো একটি নমুনা দেয়া যাক। এটা সবাই না হলেও অনেকেই জানেন যে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নব্যপ্রস্তর যুগের ভষ্মীভূত একটি অস্ত্র পাওয়া যায়। ফলে নৃবিজ্ঞানী ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করেন যে, চট্টগ্রামের এ অঞ্চলে নব্যপ্রস্তর যুগের সাংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চা ছিল।
নৃবিজ্ঞানী ও ভাষাতাত্ত্বিকরা আরো ধারণা করেন যে, সম্ভবত এ অঞ্চলের লোক অস্ট্রো-এশিয়াটিক জনগোষ্ঠীর শাখা ছিল। নৃতাত্ত্বিক সময় গণনার হিসাব অনুযায়ীম নব্যপ্রস্তর যুগ ছিল খ্রিস্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর আগে। যদি তাই হয়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের অস্তিত্ব এবং এতদঞ্চলের মানুষের বসতির বয়স প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে। সে হিসাবে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী পৃথিবীর ১৩তম প্রাচীন নগরী ইরাকের আরবিল শহরের আগে চট্টগ্রামের অবস্থান হওয়া কথা। এবং খুবই স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রাম এশিয়ার ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম নগরী হওয়ার দাবি রাখে।
নুরুল আজিম রনি– সাঃ সম্পাদক(সাবেক) চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.