বাংলাদেশে ৩ নভেম্বর জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন।
৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন।
১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট জাতি পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশকে পুরোপুরি নেতৃত্ব শূন্য করার পরিকল্পনা নেয় ঘাতকরা৷ আর তাই ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় ৪ নেতাকে৷
আগষ্টেই জাতীয় ৪ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ. ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে আটক করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়৷ ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় ৪ নেতাকে৷ তখন কারগারের জেলার ছিলেন আমিনুর তিনি বলেন, তখনকার আইজি প্রিজন নুরুজ্জামান ৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে সেই রাতে কারাগারে প্রবেশ করেন৷ এরপর টেলিফোনে খন্দকার মোশতাক ৪ নেতার নাম জানিয়ে দেন নরঘাতকদের৷ নিউ সেলে জড়ো করে ঘাতকরা ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে৷
হত্যাকান্ডের ২ দিন পর পরিবারের সদস্যদের কাছে জাতীয় নেতাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়৷ কিন্তু তা ছিল সেনা পাহারায়৷
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম
১৯৪৯ সালে পাকিস্তান সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি সরকারের কর বিভাগে অফিসার পদে যোগ দেন। ১৯৫১ সালে সরকারি চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি ময়মনসিংহে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ভাষা আন্দোলনকালে গঠিত সর্বদলীয় অ্যাকশন কমিটির সদস্য হিসেবে ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সাল থেকে ছয়দফা আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে আইয়ুব সরকার আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ বহুসংখ্যক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। সেই সঙ্কটময় সময়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন (১৯৬৬-১৯৬৯)।
১৯৬৯ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ‘ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি’ নামে একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করে এবং এর অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে (১৯৬৯) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিরসনের লক্ষ্যে রাওয়ালপিন্ডিতে সরকারের সাথে বিরোধীদলগুলির গোলটেবিল বৈঠকে (১৯৬৯) তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৭ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের উপনেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭১-এর অসহযোগ আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে (১৯ মার্চ ১৯৭১) সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহযোগী। ২৫ মার্চ (১৯৭১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেপ্তারের পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। নবগঠিত এই সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় তাঁর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রিপরিষদে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির পুনর্গঠনে তিনি নিরলস কাজ করেছেন। ১৯৭২ সালে তিনি আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির উপনেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-২৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি দ্বিতীয় বারের মতো জাতীয় সংসদে দলের উপনেতা নির্বাচিত হন। তিনি শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৭৫ সালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি হন। ওই বছর বাংলাদেশ কৃষকশ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি এর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য কর্তৃক সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। এরপর দেশে সামরিক আইন জারি করা হয় এবং খোন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতি হয়ে পুরনো সহকর্মীদের কয়েকজনকে তাঁর মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ চার নেতা তাজউদ্দিন আহমদ, এম. মনসুর আলী এবং এ.এইচ. এম কামারুজ্জামান উক্ত মন্ত্রিসভায় যোগদানে অস্বীকৃতি জানালে ২৩ আগস্ট গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি হন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁকে বনানী গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদে
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে ১৯২৫ সালে তার জন্ম গ্রহণ করেন। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৪৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৮ সালে আইএ এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে কারাবন্দি অবস্থায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিনি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। রাজনীতিক ও আইনজীবী তাজউদ্দীন আহমদ পবিত্র কোরানে হাফেজও ছিলেন।
ছাত্রজীবনথেকেই তাজউদ্দীন আহমদ সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত হন। ১৯৪৩ সাল থেকে তিনি মুসলিম লীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
পাকিস্তানআন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগ সরকারের গণবিচ্ছিন্ন রাজনীতির প্রতিবাদে তিনি এ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের (১৯৪৯) অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলা ছাত্রলীগের (বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনকালে গ্রেফতার হন এবং কারা নির্যাতন ভোগ করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনেরনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে কাপাসিয়া থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছরই তিনি ৯২-ক ধারায় গ্রেফতার হন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারির পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তাজউদ্দীন আহমদ গ্রেফতার হন এবং ১৯৫৯ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬২ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি কারাবরণ করেন। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই বছরে এপ্রিলে তিনি গ্রেফতার হন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (১৯৬৫) সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৬-দফা আন্দোলনের সময় দেশরক্ষা আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে তিনি দলের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন। রাজনৈতিক বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে বিরোধী দল ও সরকারের মধ্যে আলোচনার জন্য রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কর্তৃক আহূত গোলটেবিল বৈঠকে (১৯৬৯) তিনি আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
পাকিস্তানসরকার সত্তরের নির্বাচনের গণরায়কে কার্যত অস্বীকার করে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দুর্বার অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় এবং তাজউদ্দিন আহমদ এ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি ঢাকা ত্যাগ করে ভারত গমন করেন। ১০ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে তিনি এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। মুক্তিবাহিনীর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বরতিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সদ্য স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হলে (১৯৭২) তাজউদ্দীন আহমদ প্রথমে অর্থ এবং পরে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি সংবিধান প্রণয়নে বিশিষ্ট ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা-২২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে এবং ২৩ আগস্ট তাজউদ্দীন আহমদকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় ৩ নভেম্বর অপর তিন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং মুনসুর আলীর সঙ্গে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী তাজউদ্দীন আহমদ গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৪২ সাল থেকে আজীবন বয়স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত ছিলেন।
শহীদ এম মনসুর আলী
ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনসুর আলী ১৯১৯ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর থানার কুড়িপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম।
তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ এবং আইন ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি পাবনা জেলা আদালতে আইনব্যবসা শুরু করেন।
ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনসুর আলী ১৯৪৪ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন এবং ১৯৫১ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি ক্যাপ্টেন! কিসের ক্যাপ্টেন, কেন ক্যাপ্টেন এ প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে তিনি জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ড (পিএনজি)তে যোগদান করেন। তিনি সেখানে অনারারি ক্যাপ্টেন মর্যাদায় যশোর ক্যান্টেনমেন্টে কাজ করতে থাকেন। কিন্তু এম মনসুর আলী জীবদ্দশায় কখনও তাঁর নামের আগে ক্যাপ্টেন উপাধি ব্যবহার করেননি।
আওয়ামী লীগে যোগদানের পর তিনি সিরাজগঞ্জ-কাজীপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার খাদ্য, আইন ও রাজস্ব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। সেই থেকে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন শুরু করেন এবং জনগণের ভালবাসা অর্জন করেন।১৯৭০-এর নির্বাচনে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এম মনসুর আলীও আটক হন। '৬৯-এর গণআন্দোলনে মুক্ত হন। গ্রামগঞ্জে ৬ দফা প্রচারে তিনি ছিলেন ক্লান্তিহীন চারণ রাজনীতিবিদ। অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলোতে বলতেন, পাকিস্তান টিকবে না। যে পাকিস্তান অর্জনের জন্য কাজ করেছি হোমগার্ডের, হয়েছিলাম ক্যাপ্টেন; এখন সেই পাকিস্তানকেই কবর দিতে হচ্ছে। ওরা ৬ দফা মানবে না। আমরাও থাকব না। বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শহীদ এম মনসুর আলী ছিলেন তীক্ষষ্টধী, অমায়িক এবং মানবকল্যাণে এক নিবেদিত রাজনীতিবিদ। সমগ্র জীবন সাধনায় ছিল মানবকল্যাণে। তিনি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন ও মরণের সঙ্গী। বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপল্গবের (বাকশাল) কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এম মনসুর আলী প্রধানমন্ত্রী হলেন। জেলা গভর্নরদের প্রশিক্ষণ বক্তৃতায় তিনি বলেন, 'পৃথিবীর বড় বড় ইতিহাস দুঃসাহসিক সৃষ্টি। বিশ্বের ইতিহাসে যেসব নেতা জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন, বঙ্গবন্ধু তাদের অন্যতম। সাধারণ পন্থায় যা সম্ভব নয়, তা অসাধারণ পন্থায় করাই বিপল্গব। বিপল্গবের বিশেষ ধর্ম আছে, পথ আছে। সেই পথে বিপল্গবকে অগ্রসর হতে দিতে হবে, মাঝপথে ছেড়ে দিলে চলবে না, গন্তব্যস্থলে পেঁৗছাতে হবে।'
জাতির পিতাকে হত্যা করে এম মনসুর আলীকে খুনি মোশতাক তাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি তীব্র ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন। জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে তিনি ছিলেন আপসহীন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও জীবনাদর্শের বিপরীতে আপসহীনতায় কৃষ্ণছায়ায় বেঁচে থাকার সুযোগ গ্রহণ করেননি। বঙ্গবন্ধুর যথার্থ সহচর হিসেবে জীবনে ও মরণে ছিলেন তার অনুগামী। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খুনি মোশতাক চক্র ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও এম কামারুজ্জামানের সঙ্গে তাকে গুলি করে ও বেয়নেটে খুঁচিয়ে হত্যা করে। আদর্শের জন্য মৃত্যুবরণ করে তিনি হয়ে আছেন এক মৃত্যুঞ্জয়ী মহাপুরুষ।এ মহান নেতার জন্মবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান
বর্তমান নাটোর জেলার অন্তর্গত বাগাতিপাড়ার মালঞ্চী রেলস্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মামার বাড়িতে ১৯২৬ সালের ২৬ জুন তারিখে এ এইচ এম কামরুজ্জামান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জ মহল্লায়। তিনি বনেদি জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার পিতা আবদুল হামিদ ও মাতা বেগম জেবুন্নিসা। তার ১২ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম। তাঁর ডাকনাম ছিল হেনা।
শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের পুরো নাম আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান তিনি বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। একজন নির্লোভ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
তার পৈতৃক বাড়ি ছিল রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জ মহল্লায়। তিনি জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার বাবার নাম আবদুল হামিদ ও মায়ের নাম জেবুন্নিসা। তার ১২ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম। ১৯৫১ সালে কামারুজ্জামান জাহানারা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল গ্রামের আশরাফউদ্দিন তালুকদারের মেয়ে জাহানারা। আশরাফ উদ্দিন তালুকদার ওই অঞ্চলের জোতদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি ৬ সন্তানের বাবা। তার বড় ছেলে এ এইচ এম খাইরুজ্জামান লিটন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র। মেজো ছেলে এ এইচ এম এহসানুজ্জামান স্বপন (জন্ম ১৯৬১)। বর্তমানে তিনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরিরত রয়েছেন। মেয়েদের নাম ফেরদৌস মমতাজ পলি (জন্ম ১৯৫৩), দিলারা জুম্মা রিয়া (জন্ম ১৯৫৫), রওশন আক্তার রুমী (জন্ম ১৯৫৭) ও কবিতা সুলতানা চুমকি (জন্ম ১৯৬৪)।
পড়াশোনাঃ
পড়াশোনার শুরু রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে। বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সমাজসেবক আব্দুস সামাদ ছিলেন তার পড়াশোনার প্রেরণার উৎস।
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন তার এক ফুপা। তিনি রাজশাহী থেকে চট্টগ্রামে বদলি হয়ে যাওয়ার সময় কামারুজ্জামান হেনাকেও সঙ্গে নিয়ে যান এবং চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করে দেন। সেখান থেকেই ১৯৪২ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য যান কলকাতা এবং বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে অর্থনীতিতে অনার্সসহ স্নাতক পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাঠ শেষ করে তিনি চলে এসেছিলেন নিজ শহর রাজশাহীতে। চলতে থাকে রাজনীতি। পুনরায় ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে স্নাতক ছেলেটি এবার পড়াশোনা শুরু করেন আইন নিয়ে। রাজশাহী কলেজ যে বছর আইন বিভাগ খোলে, সে বছর প্রথম ব্যাচেই অর্থাৎ ১৯৫৬ সালে, তিনি এখান থেকেই লাভ করেন বিএল ডিগ্রি। শুরু করেন আইন পেশা। প্রসার লাভ করেন আইন পেশায়।
রাজনীতি
কামারুজ্জামান ছিলেন পারিবারিক ভাবে রাজনীতি সচেতন। তার দাদা হাজি লাল মোহাম্মদ সরদার কংগ্রেস রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এ কারণে কংগ্রেস ও প্রথম সারির মুসলিম লীগ নেতাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো। হাজী লাল মোহাম্মদ দু'বার অবিভক্ত বাংলার লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য (এম.এল.সি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি রাজশাহী এসোসিয়েশন ও বরেন্দ্র একাডেমীর একমাত্র মুসলিম সদস্য ছিলেন। তার পিতা মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন রাজশাহী অঞ্চলের মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত বাংলাদেশ ও পরে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। তাই এ এইচ এম কামারুজ্জামান রাজনীতি সম্পর্কে আগ্রহী হওয়া স্বাভাবিক ছিল।
১৯৫৬ সালে কামারুজ্জামান আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৬২ ও ১৯৬৬ সালে পরপর দু’বার এএইচএম কামারুজ্জামান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬-দফার সময় তিনি ৬-দফা আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করেন। পরের বছর ১৯৬৭ সালে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা নির্বাচিত হন। আইয়ুব সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১-দফা দাবির সমর্থনে ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পুনরায় তিনি রাজশাহী থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকাঃ
১৯৭০ সালের নভেম্বরের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণকার্যে সরকারের অনীহা এবং ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভের পরও আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা ইত্যাদি কারণে বাঙালিদের মনে অসহিষ্ণুতা দেখা দেয়। বাঙালিরা তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সরকার নিরীহ-নীরস্ত্র বাঙালি নিধনের উদ্দশ্যে সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয়, যা ইতিহাসে অপারেশন সার্চলাইট নাম পরিচিত। এই কুখ্যাত গণহত্যার সময় পাকিস্তানী বাহিনী শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। কিন্তু তিনি এর পূর্বেই তার দলের নেতা কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেছিলেন। তাই তিনি শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমেদ ও আরও কয়েকজন নেতাকে নিয়ে বগুড়া হয়ে কলকাতা চলে যান[২]। সেখানে তার সাথে তাজউদ্দিন আহমদ সহ অন্যান্য নেতাকর্মীর দেখা হয়। ওখানে তারা সকলে মিলে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। আর সবার সিদ্ধান্তে ১৯৭১ এর ১০ এপ্রিল গঠিত হয় প্রথম অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার, এবং ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা বৈদ্যনাথ তলায়(পরবর্তীতে মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ অণুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে।
নবগঠিত মুজিবনগর সরকারে তাকে স্বরাষ্ট্র,কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।[৬] কামারুজ্জামান ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে তিনি মুক্তাঞ্চল, শরণার্থী শিবির ও সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করতেন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন কামারুজ্জামান। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কামারুজ্জামান।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে নির্বাচন দিলে এই সাধারণ নির্বাচনে তিনি রাজশাহীর দুটি সদর গোদাগাড়ি ও তানর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখে তিনি মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে ঐ সময় কামারুজ্জামান সহ আরো তিন নেতাকে গ্রেফতার ও কারাবন্দী করা হয়। ঐ বছরেরই ৩ নভেম্বর ভোর সাড়ে চারটায় উক্ত কারাগারের অভ্যন্তরে তাকে সহ আরো তিন নেতাকে কিছু সেনা সদস্য নির্মমভাবে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। তার মৃতদেহের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম পাওয়া যায় এবং বিশেষ করে ডান দিকের পাঁজরে এবং ডান হাতের কনুইতে বড় রকমের ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যায়।[৭] ঐ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে জেল হত্যা দিবস নামে কুখ্যাত হয়ে আছে।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.