পদ-পদবীতে বেতন নেই, কর্মমুখী শিক্ষা নিন :শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
পদ-পদবীর পেছনে না ছুটে কর্মমুখী শিক্ষা নিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদের তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
শিক্ষা উপ-মন্ত্রী বলেছেন, আমরা যারা ছাত্রলীগ-যুবলীগ করি, আমরা পদ-পদবীর জন্য একজন আরেকজনের মাথা কেটে ফেলছি।
কিন্তু এই পদে তো কোনো বেতন নেই। আপনাদের এটা বুঝতে হবে। পদে যেহেতু কোনো বেতন নেই তাহলে আয়ের সংস্থান কীভাবে হবে?
শনিবার (৩১ অক্টোবর) হাটহাজারীতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) আয়োজিত করোনা ল্যাব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদের উদ্দেশে শিক্ষা উপ-মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আপনারা যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা যেখান থেকেই পাস করছেন- তাদের সবার জন্য সরকারি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা আমাদের দেশে সম্ভব নয়। প্রায় ২৮ লাখ ছাত্র-ছাত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করছেন। ২৮ লাখ জব বাংলাদেশে অর্থনীতির ধরনে সৃষ্টি হবে না।
শিক্ষা উপ-মন্ত্রী নওফেল বলেন, আমাদের অর্থনীতির ধরন হচ্ছে কৃষিভিত্তিক। সেখান থেকে আমরা এখন শিল্পায়নের দিকে যাচ্ছি। এতো চেয়ার টেবিলের চাকরি আমাদের নেই। এতো দাফতরিক চাকরি আমাদের নেই। এতো সার্ভিস ইকোনমি আমাদের নেই। এটা বুঝতে হবে
‘এখন আপনারা পিতা-মাতার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাবার হোটেলে খেয়ে তো সারাজীবন থাকা যাবে না। নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এটার জন্য আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ফ্যাসিলিটি দেওয়া হচ্ছে। ’
নওফেল বলেন, শুধু সরকারি চাকরির আশায় বসে থাকলে বা সরকারি ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কের মেকানিক হিসেবে কাজ করার আশায় বসে থাকলে আপনাদের কপাল, আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না। এই উপলদ্ধিটা আপনাদের আসতে হবে।
‘পদ থাকলে না হয় ছোট ভাই, বড় ভাই- সবাই দেখলো। এটা নিয়ে আপনি পেটে ভাতে চললেন, সুন্দর কাপড় পরলেন, দামি মোবাইল নিয়ে ঘুরলেন। কিন্তু যখন পদ থাকবে না, তখন একটা কর্মসংস্থানের দরকার হবে। এটা চিন্তা না করে একজন আরেকজনের মাথা ফাটালে লাভ হবে না। ’
নওফেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সৃষ্টিশীল রাজনীতি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সৃষ্টিশীল রাজনীতির মানে হচ্ছে- দেশের তরুণ সম্পদকে, তরুণ সমাজকে দক্ষ করার কাজে আগে নেতাকে নামতে হবে। শুধু পদ নিলে সেই পদ দিয়ে কী হবে?
তিনি বলেন, পদ পেয়ে আপনি যদি কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে পারেন, ৫ জন কর্মীকে দক্ষতাভিত্তিক কাজে অংশগ্রহণ করাতে পারেন- সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি তাদের জীবনমুখী বা ব্যবহারিক শিক্ষার যেসব স্কোপ আছে সেদিকে ধাবিত করতে পারেন তবেই আপনার পদের স্বার্থকতা।
‘নয়তো এই স্কোপ, এই ফ্যাসিলিটিগুলো যারা আমাদের বিপরীত রাজনীতি করে তারা নিয়ে নেবে। আমরা আমাদের মাথা ফাটাতেই ব্যস্ত থাকবো। কেন আমি যুগ্ম সম্পাদক হতে পারলাম না, কেন আমি সাংগঠনিক সম্পাদক হতে পারলাম না, এটা নিয়েই ঝগড়া করতে থাকবো। এতে আপনারও কোনো লাভ হবে না, আপনার কর্মীরও কোনো লাভ হবে না। ’
নওফেল বলেন, কর্মীদের যদি আপনারা বৃক্ষরোপণ থেকে শুরু করে গবাদিপশু পালন- যেটাতে তার নিজের কর্মসংস্থান হবে সেদিকে ধাবিত করতে পারেন, যার কিছুটা কম্পিউটারে দক্ষতা আছে তাকে আউট সোর্সিং, ডাটা অ্যানালাইসিস শেখাতে পারেন তবে ঘরে বসেও তার একটা আয় করার সুযো্গ তৈরি হবে। আদর্শিক রাজনীতির পাশাপাশি তারা আত্মকর্মসংস্থান লাভ করবে।
ছাত্রলীগের আদর্শের একজন ছাত্র যখন কোনো সরকারি বা বেসরকারি পদে আসীন হয়, সেখানে কিন্তু আমাদের আদর্শটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা পদ-পদবী নিয়ে নেতা হয়ে যদি শুধু মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে থাকে- তাহলে চেয়ার টেবিলে জায়গা তো হবেই না, কোনো কর্মসংস্থানও হবে না। আমাদের আদর্শ ধুকে ধুকে মরবে।
সিভাসু’র উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম।
বাংলা নিউজ
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.