আমাদের ঈমান কি এতই দূর্বল যে কোনো উৎসবে গেলে সে ঈমান চলে যাবে??? শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল
উৎসব আর উপাসনার মধ্যে পার্থক্য যারা বোঝেনা তারাই দ্বীনের অপব্যাখ্যাকারী
সুরা আল বাকারাহ ২৫৬/০২ঃ
... "দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নেই; অবশ্যই ভুল পথ থেকে সঠিক পথ সুস্পষ্ট হয়েছে, সুতরাং, যে তাগুতকে ত্যাগ করে, এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনে, সে এমন মজবুত রশি আঁকড়ে ধরল যা কখনও ছিন্ন হবার নয়, এবং আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও সব কিছু জানেন। "...
এই আয়াতের উপরে এই অপব্যাখ্যাকারীরা কি বলবে??? যাদের ঈমান আছে তারা কি উৎসবে গেলেই ঈমান চলে যাবে???
আমাদের অনেকের মধ্যে ইণ্টারনেটের মাধ্যমে, ফেসবুকে, অনেক কুসংস্কার, কোরান, হাদিস, ও ইজমার ভুল এবং সহিংস ব্যাখ্যা ছড়ানো হচ্ছে। অপব্যাখ্যাকারীরা প্রতিনিয়ত মুমিন মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস, ঈমান কে চ্যালেঞ্জ করছে। ঈমান এত দূর্বল বিষয় নয়। যেই মুসলমানের ঈমান আছে সে কোনো উৎসবে গেলে, বা উৎসবে সহমর্মিতা প্রকাশ করলে, বা শুভেচ্ছা জানালে তার ঈমান দূর্বল হয়ে যায় না!
আমাদের ঈমান কি এতই দূর্বল যে কোনো উৎসবে গেলে সে ঈমান চলে যাবে???
ইন্টারনেটে প্রচুর মৌলবাদি নিজেদের প্রকাশিত করছে প্রতিনিয়ত এবং আমাদেরকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা যারা ধর্মপ্রান মুসলমান, তাদের ঈমানকে এরা দূর্বল করার জন্য এইসব প্রচারণা চালায় এরা।
পবিত্র কোরান শরিফের "লা-ক্কুম দ্বিন-উ-ক্কুম ওয়াল ইয়া দ্বীন" এই পবিত্র আয়াতের অপব্যাখ্যাকারীরা বলছে সার্বজনীন উৎসব ঈমানের বিরুদ্ধে! বলছে এর মানে হলো, কারো উৎসবে শুভেচ্ছা জানালে, শরিক হওয়া গুনাহ।
উৎসব আর উপাসনা কি এক বিষয়????
উৎসবে শুভেচ্ছা জানালে কেনো আমার ঈমান চলে যাবে?? উৎসব সবার বললে কেনো সেটা ধর্মের বিরুদ্ধে হবে??? একটি পুজোয় শুভেচ্ছা জানানো কেউ, বা সেই উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা কি সেই ধর্মে বিশ্বাস করছে, বা সেই ধর্মের উপাসনা করছে?? বা তার প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করছে??? এই ধরনের লোকেরাই নারীর কাপড়কে দোষ দেয় ধর্ষনের জন্য, যখন দেখে আমার অনেক মা বোন বোরকা পরেও ধর্ষিত হয়েছে তখন তার আদবকে দোষ দেয়, কারন এরা মুনাফিক।
আস্তাগফিরুল্লাহ!!! এদের কাছ থেকে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের দূরে রাখুক।
ঈমান কি এতই দুর্বল যে অন্য কারো বিশ্বাসে বিশ্বাস আনছি শুধুই উৎসব সার্বজনীন করে????
আমার বিশ্বাস আমার, এবং সেই বিশ্বাস কোনো উৎসবে টলে গেলে বুঝতে হবে আমার ঈমান দুর্বল।
আল ক্কাফিরুন ০৬/ ১০৯ঃ "তোমাদের কর্মফল তোমাদের জন্য আমার কর্মফল আমার জন্য। "
লা ক্কুম দ্বিন উ ক্কুম ওয়াল ইয়া দ্বীন।
আমি যদি উপাসনা না করি অন্য ধর্ম মতে তাহলে কেনো কোনো সমস্যা?? উৎসব আর উপাসনা এক বিষয় নয়!
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িকে সমর্থন করে না পবিত্র দ্বীন, ইসলাম।
ইসলামের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে এবং জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়। ’ -সুনানে আবু দাউদ : ৫১২৩
একে অন্যের ধর্ম পালন করতে গিয়ে কেউ কোনোরূপ সীমা লঙ্ঘন কিংবা বাড়াবাড়ি করবে না। অন্য কেউ যদি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেও ফেলে তবে ভুলেও যেন কোনো ইমানদার এ ধরনের হীন ও জঘন্য কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে। এ বিষয়টিই নসিহতস্বরূপ মুমিনদের উদ্দেশে আল্লাহতায়ালা বলছেন,
‘হে ঈমানদারগণ! তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব দেবদেবীর পূজা-উপাসনা করে, তোমরা তাদের গালি দিও না। যাতে করে তারা শিরক থেকে আরো অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে। ’ -সূরা আনআম: ১০৮
ইসলামের মূল উৎস কোরআনে কারিম এবং হাদিস পরধর্মের মানুষকে আপনের চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা ও সম্মান করার কথা বলেছে। ইতিহাস সাক্ষী, আমরা দেখেছি শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আপনজনের অনেকেই ছিল ইসলামের কট্টর দুশমন।
যেখানে অন্য ধর্মের দেবতাকে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ সেখানে মন্দির ভাঙচুর ও মানুষ হত্যা কীভাবে বৈধ হতে পারে?
একজন প্রকৃত মুসলমান কখনোই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত আসে এমন কোনো কাজ করতে পারে না। একজন প্রকৃত মুসলমানের পক্ষে মন্দির ভাঙ্গা তো দূরের কথা মন্দির ভাঙ্গার চিন্তা করাও সম্ভব নয়।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুন্ন করে কিংবা তাদের ওপর জুলুম করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি মুহাম্মদ(দঃ) ওই মুসলমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে লড়াই করব। ’
–সুনানে আবু দাউদ : ৩০৫২
তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে হত্যাকারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেই ওই ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। ’
–সহিহ বোখারি : ৩১৬৬
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। ’
-সুনানে নাসাঈ : ৪৭৪৭
রাসূলুল্লাহ (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের চিরাচরিত নিয়ম ছিল,যখন কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করার প্রয়োজন হতো, তখন যুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন নসিহত, দিকনির্দেশনার পাশাপাশি একথা অবশ্যই বলে দিতেন যে,
‘যুদ্ধকালীন সময়ে বা যুদ্ধের পর কোনো মন্দির-গীর্জা-উপাসনালয় ভেঙে ফেলবে না। ’
-মুসান্নাফ আবি শায়বা : ৩৩৮০৪
মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার তৌফিক দান করুন। এই অপব্যাখ্যাকারীদের কাছ থেকে আমাদের দূরে রাখুন।
যারা মনে করে উৎসব মানেই ঈমান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এরা উৎসব আর উপাসনার পার্থক্য বুঝেনা। উপাসনা (সালাতের) ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ব্যখ্যা পবিত্র কোরানে আছে, অনেক হাদিস আছে, ইজমা আছে, শিরক কি কেনো, তারও ব্যখ্যা আছে।
মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.