বাসকের ছাল,পাতা,রস এর গুনাগুণ
বাসকের ঔষধি গুণ:
বাসক আমাদের উপমহাদেশীয় একটি ভেষজ উদ্ভিদ।বাসকের অনেক গুণ। বাসকের ছাল, পাতা, রস সবই উপকারী। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বাসক পাতাকে নানা রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। আর্দ্র, সমতলভূমিতে বেশী জন্মে। হালকা হলুদে রংয়ের ডালপালা সহ ১ থেকে ২ মি. উঁচু গাছ সৰ্ব্বদাই প্রায় সবুজ থাকে। সর্দি-কাশির মহা ওষুধ বাসক, একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। স্পাইকের বৃন্ত পাতার চেয়ে ছোট।পাতার আকারে উপপত্র থাকে যার গায়ে ঘন এবং মোটা শিরা থাকে। ফল সুপারি আকৃতির বীজে ভর্তি বাসকের অনেক গুণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বাসক পাতাকে নানা রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়।
সর্দি-কাশির মহা ওষুধ বাসক
** বাসকের ঔষধি গুণ: কঁচা অথবা শুকানো পাতা কাজে লাগে। বাসকের পাতায় ভাসিসিন নামক পদার্থ এবং তেল থাকে শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মনাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ বাসক পাতার নির্যাস,রস বা সিরাপ শ্লেম্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা ক'রে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী,তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি হয়, অন্তত: বমির ভাব বা নসিয়া হয়, অস্বস্তি হয়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় বাসকের ভেষজ গুণাবলি প্রমাণিত হয়েছে। এর মূল, পাতা, ফুল, ছাল সবই ব্যবহার হয়।
** বাসকপাতার রস ও শঙ্খচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে রং ফরসা হবে।
** এক কলসি পানিতে তিন-চারটি বাসকপাতা ফেলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্যবহার করতে পারেন।
** পাতার রস নিয়মিত খেলে খিঁচুনি রোগ দূর হয়ে যায়।
** বাসক পাতার রস মাথায় লাগালের উকুন চলে যায়।
** বাসক পাতা বা ফুলের রস এক বা দুই চামচ মধু বা চিনি দিয়ে খেলে জন্ডিস ভাল হয়।
** শরীরে দাদ থাকলে বাসক পাতার রস লাগালে ভাল হয়ে যায়।
অন্যান্য উপকারিতা: বাসকের পাতা সবুজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পাতা থেকে হলদে রং পাওয়া যায়। বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে যায় ফলে ছত্রাক জন্মায় না এবং পোকামাকড় ধরে না বলে ফল প্যাকিং এবং সংরক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। পাতায় কিছু দুর্গন্ধ আছে বলে পশুরা মুখ দেয় না সেই কারণে চাষ আবাদের জন্য জমি উদ্ধারের কাজে বাসকের পাতা বিশেষ উপকারী
** যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্যে শ্বাসকষ্ট হলে বা কাশি হলে বাসক পাতার রস ১-২ চামচ এবং কন্টিকারীরস ১-২ চামচ, ১ চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
** প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রনা থাকলে বাসকের ফুল বেটে ২-৩ চামচ মিছরি ১-২ চামচ সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
** জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলি লিটার পানিতে ফোটাতে হবে ২৫ মিলি লিটার থাকতে নামিয়ে তা চেঁকে নিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে জ্বর এবং কাশি দুইই চলে যায়।
** বাসকের কচিপাতা ১০-১২ টি এক টুকরো হলুদ একসঙ্গে বেটে দাদ বা চুলকানিতে লাগলে কয়েকদিনের মধ্যে তা সেরে যায়।
** বাসকপাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনি ১ সহ প্রতিদিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়।
ভেষজ দাওয়ায়:
** ক্রিমিতে:- শিশুর পেটে কৃমি থাকলে বাসকের ছালের ক্বাথ খাওয়ালে এর উগ্র তিক্ত স্বাদ কৃমি বের হয়ে যায়। বয়সানুপাতে মাত্রা মতো উপরিউক্ত পদ্ধতিতে বাসক ছালের ক্বাথ করে খাওয়ালে ক্রিমিও মরে যায়।
** যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তারা বাসক পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে।
** অম্লপিত্ত রোগে: এ রোগে দীর্ঘদিন ভুগতে থাকলে আসে অম্লশূর এই অম্লপিত্তকে বন্ধ করতে হলে ৭ থেকে ৮ গ্রাম বাসক ছাল ৪ কাপ আন্দাজ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে নিয়ে সেই পানিটা দুই তিন বারে প্রতিদিন খেলে বিশেষ উপকার হয়।
** ১-২ চামচ বাসক পাতার রস ও হাফ থেকে এক চামচ মধুসহ খেলে শিশুর সদির্কাশি উপকার পাওয়া যায়।
** বাসক পাতার রস স্নানের আধ ঘন্টা আগে মাথায় কয়েকদিন মাখলে উকুন মরে যায়।
কোন মন্তব্য নেই
please do not enter any spam link in the comment box.